ঘূর্ণিঝড় রিমালের ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়নি। এখনো বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন হাজারো গ্রাহক। তবে দু-এক দিনের মধ্যে সব জায়গায় লাইন চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ওস্তাখান গ্রামের গ্রাহক আলেয়া বেগম, মিনার বেগম, শেফালী আক্তার, সেতার আক্তার, আজগর আলী ও কালাম ফরাজী বলেন, ‘অসহনীয় গরম, এমন অবস্থায় ১১ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। রাতে ঘুমাতে পারি না। বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করার জন্য পানি তুলতে পারছি না। এত বড় ঝড় গেল, আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করব যে, মোবাইলেও কল যায় না। আমরা একেবারে অন্ধকারে আছি। জীবন এত দুর্বিষহ যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান আকতার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে রিমালে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক তারে উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছ। ভেঙে গিয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ছিঁড়েছে তার। দ্রুত বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সঙ্গে এলাকার যুব সমাজ একত্রিত হয়ে স্বেচ্ছায় গাছ কাটায় সহযোগিতা করছে।’

ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের সাড়ে চার শ স্টাফ কাজ করেছেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়নি। হয়তোবা দু-এক দিনের মধ্যে সব জায়গায় লাইন চালু করা হবে।

 

বরিশালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর সেমিনারে হাতাহাতি হয়েছে। পরে লাঠিসোটা নিয়ে নগরীর সড়কে মহড়া দিয়েছে এক যুবদল নেতার শতাধিক অনুসারী।

বুধবার (৫ জুন) বিকেলে ৫টার দিকে নগরীর স্বরোডে এ মহড়ার ঘটনা ঘটে।

এসময় তারা প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালাতে সোনালী আইসক্রিম মোড় এলাকা হতে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়ে সেমিনারস্থল স্বরোডের দিকে আসে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ঘটনার আগে বিকেল ৩টার দিকে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নগরীর স্বরোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সেমিনার শুরু হয়। সেই সেমিনারে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম জাহানসহ তার অনুসারীরা যোগ দেন। তারা প্রবেশের আগেই বিকেল তিনটা থেকে সেমিনার হলের পিছনের সারির চেয়ারে বসে ছিলেন মহানগর যুবদল নেতা আরিফুর রহমান মুন্নার অনুসারীরা। এসময় মুন্নার অনুসারীদের চেয়ার ছেড়ে দিতে বললে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরপর জাহানের অনুসারীরা প্রকাশ্যে লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা করতে মহড়ায় নামে বলে অভিযোগ যুবদল নেতা মুন্নার।বুধবার ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শহীদ জিয়ার অবদান’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বরিশাল বিএনপি। এ সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম। প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। সভাপতিত্ব করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরীন। তাদের সামনেই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মহড়ার সময়ও সেমিনার চলছিলো।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জব্বার জানান, দিনের আলোতে হঠাৎ এমন মহড়া দেখার পর থেকে আতংকে আছি। লাঠিসোটা নিয়ে প্রকাশে ঘুরে বেড়ানোর এ দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না।

মহানগর যুবদল নেতা ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান মুন্না বলেন, মাজাহারুল ইসলাম জাহানের অনুসারীরা তিনটায় শুরু হওয়া সেমিনারে সাড়ে ৪টায় প্রবেশ করে ইচ্ছে করে গ্যাঞ্জাম করেছে। আমার নেতাকর্মীরা আগে এসে চেয়ারে বসে ছিলো। তখন জাহানসহ তার অনুসারীরা সেমিনার হলে প্রবেশ করে আমার কর্মী সাকিবকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলে। তখন সে চেয়ার ছাড়তে রাজি না হওয়ায় জাহানের এক অনুসারী সাকিবকে থাপ্পর দেয়। তারপরই দুই গ্রুপ হাতাহাতিতে জড়ায়। এরপর জাহানের অনুসারীরা লাঠিসোটা আমার অনুসারীদের উপর হামলা চালাতে আসলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এ বিষয়গুলো আমি সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি।

এ বিষয়ে মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম জাহান বলেন, আমি এখন সেমিনারে আছি। প্রধান অতিথি বক্তৃতা দিচ্ছেন, তাই এখন কথা বলা যাবেনা।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ পুরোপুরি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কোন পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

 

চতুর্থধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার তিনটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আজ বুধবার (৫ জুন) রাতে বেসরকারি ফলাফলে তারা বিজয়ী হয়েছেন।

বাবুগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা বিনতে ওহাব। উজিরপুরে চেয়ারম্যান হয়েছেন হাফিজুর রহমান ইকবাল এবং বানারীপাড়ায় গোলাম ফারুক।

বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বরিশাল জেলার একমাত্র নারী প্রার্থী ফারজানা বিনতে ওহাব। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ২৮ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালেদ হোসেন স্বপন কাপ-পিরিচ মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩৭৯ ভোট। চার হাজার ১৯ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারি ফলাফলে জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা বিনতে ওহাব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

উজিরপুর উপজেলায় কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ২৫৮ ভোট পেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুর রহমান ইকবাল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৮ হাজার ৪৬০ ভোট। দুই হাজার ৭৯৮ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারি ফলাফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান ইকবাল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বানারীপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দোয়াত-কলম প্রতীকের গোলাম ফারুক ৩৪ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাওলাদ হোসেন সানা পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭৩১ ভোট। এর আগে আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ তিন উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়।