দীর্ঘ ১৮ বছর পরে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত এক বছর আগে দুই বছর মেয়াদি বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটিকে ৪৮৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। প্রতিষ্ঠার পর এটিই বরিশালে ছাত্রদলের সবচেয়ে বড় কমিটি। অছাত্র, বিবাহিত, প্রবাসী, চাকরিজীবী, নারী ও মাদক কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্তসহ সব রকম নেতারই পদায়ন হয়েছে সংগঠনটির এ কমিটিতে। যে কারনে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হয় নি এই গণকমিটিতে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সুপারফাইভ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পর জেলা ছাত্রদল সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ৩৩১ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন। আবার সুপারফাইভ কমিটির অন্য নেতারাও পৃথকভাবে আরও নামের তালিকা কেন্দ্রের কাছে জমা দেন। এসব তালিকা সমন্বয় করে কেন্দ্র থেকে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ছাত্রদলের একাধিক সূত্র।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু ৪৮৭ সদস্যের বিশাল কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এদের অনেককে তিনিও চেনেন না। এতো নেতাকর্মী কিভাবে কমিটিতে স্থান পেলো তার জানা নেই।
সুপারফাইভের যুগ্ম সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম ইমরান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা সবাইকে খুশি করতে গিয়ে বিতর্কিত অনেককে কমিটিতে পদায়ন করেছেন।ছাত্রদলের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতি কাজী সজল সম্প্রতি নগরীতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মনির এবং মামুন হাওলাদার প্রবাসে থাকেন। আরও দুই সহ-সভাপতি মনির নাপিত এবং আমিনুল ইসলামও নারী কেলেঙ্কারির কারণে জেলায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত। আরেক সহ-সভাপতি এইচ এম জসিম উদ্দিন রাজধানীতে মুদি ব্যবসায় যুক্ত। আরেক সহ-সভাপতি সপ্তম শ্রেণি পাস করা রুবেল খান চাকরি করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে, মশিউর রহমান শামিম চাকরি করেন গাজীপুরে গত আট বছর ধরে। ঠিকাদারি পেশায় যুক্ত আফজাল হোসেন তপু, বাকেরগঞ্জের বিতর্কিত ছাত্রনেতা সাদ্দাম হোসেন খান অপুও পদ পেয়েছেন এই কমিটিতে।
ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি আসিফ আল মামুন অবশ্য সুপারফাইভ কমিটির নেতাদেরই এ কমিটির জন্য দায়ী করেছেন।জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী আক্ষেপ করে বলেন, তার সহযোগী হিসেবে ৮০ জনকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। সহ-সভাপতি ৯৩ জন। গত তিন বছরে সব মিছিলে ৫০ জন নেতাকর্মী মিছল মিটিংএ পাওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম রুবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- প্রতিষ্ঠার পর এটিই বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সবচেয়ে বড় কমিটি। এই কমিটিতে এতো নেতাকর্মীকে স্থান দেয়ায় ত্যাগী নেতারা সঠিক মূল্যায়ন পায়নি। তবুও তিনি সকলের সাথে একত্রিত হয়ে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এ বিষয়ে জানতে বরিশালে কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশাল বিভাগীয় টিমপ্রধান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান বাপ্পির মুঠোফোনে একাধিকবার কল টি রিসিভি করেন নি।।
তবে বিভাগীয় টিমের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মিজান শরীফ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠন না হওয়ায় যারা পদবঞ্চিত রয়েছেন, তাদেরও এ কমিটিতে পুর্ন মূল্যায়ন করা হয়েছে।