TT Ads

 

 

মোঃ রাহাত হোসেনঃ

পৃথিবীতে বসবাসরত প্রত্যেকটি শিশুই মহামূল্যবান। কারন শান্তি ও ভালবাসার প্রতীক এসব শিশুরাই একদিন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। পৃথিবী ও বিশ্ববাসীর উন্নতিসাধন করবে। তাই শিশুর প্রতি হতে হবে অনেক যত্নশীল।শিশুদের বেড়ে ওঠার দিন গুলোতে দিতে হবে যুদ্ধ-সংঘাতহীন এক আনন্দময় শৈশব ।যেখানে থাকবেনা কোন মারামারি ,হানাহানি ও সহিংসতা।কিন্তু আদ্য কি আমরা শিশুদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিতে পারছি ?

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সহিংসতা ও হানাহানি।আর এই যুদ্ধ ও সংঘাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃত্যু হচ্ছে শিশুদের। শিশুদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে ।নির্বিচারে মারা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। শিশুর আর্তনাদে কাঁদছে আকাশ বাতাস । যুদ্ধপ্রান্তরে তৈরি হয়েছে শত শত শিশুর লাশের স্তূপ। সর্বত্র গড়াগড়ি খাচ্ছে শত সহস্র শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ।

সাম্প্রতিককালে ইসরায়েলের হামলায় গাজার শিশু-কিশোরদের দুঃখ আর দুর্ভোগের করুন চিএ ফুটে উঠেছে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন অক্টোবরের শেষের দিকেই বলেছিল, তিন সপ্তাহেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা সাম্প্রতিককালের বৈশ্বিক সংঘাতে শিশুমৃত্যুর হারকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়েছে মোট সংখ্যাকেও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা বলেছে, গাজায় গড়ে দিনে মারা যাচ্ছে ১৬০ শিশু। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজা পরিণত হয়েছে শিশুদের কবরস্থানে।চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত চার হাজার ১০৪ শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানিয়েছে। এক মাসের সহিংসতায় এই প্রাণহানি হয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, গাজার মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই ১৮-এর নিচের শিশু-কিশোর। এ কারণেও হতাহতের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। এ হামলার ফলে গাজার সাত লাখের বেশি শিশু ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

ইউনিসেফ বলেছে, এ অঞ্চলে মানবিক সহায়তার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাদের টেকসই ও নির্বিঘ্ন সহায়তার জন্য দরকার যুদ্ধরিবরতির। সেই সঙ্গে যেসব শিশুকে জিম্মি করা হয়েছে, তাদের নিরাপদে মুক্তি দাবি করেছে ইউনিসেফ।

 

গত বছর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফরম চিলড্রেন অব ওয়ার ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ইউক্রেনের হতাহতদের মধ্যে ৫১০ জন শিশু। ইউক্রেনের যুদ্ধে দিনে গড়ে একটিরও কম শিশু নিহত হয়েছে।

এখানেই শেষ নয় ,যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এতে আট হাজার ৯৯ শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন জানিয়েছে।

একই সালে ,২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১১ সালের মার্চে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ১২ হাজার শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনজন শিশু নিহত হয়েছে।

ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের লড়াই চলছে। সেখানে সাড়ে সাত বছরে তিন হাজার ৭৭৪ শিশু নিহত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। প্রতি তিন দিনে দেশটিতে চারটি শিশু নিহত হয়েছে।

এছাড়াও , ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের ভাগ্য অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। তাদের দিন কাটছে অনিশ্চয়তা্য়।

শিশুরা সহিংসতা , যুদ্ধ ,সংঘাত ,শোষণ ও জরুরি অবস্থায় অসহায় অবস্থায় থাকে। শিশুরা যুদ্ধে নিহত ছাড়াও যুদ্ধ পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সংকট সহ বিভিন্ন মানবিক সমস্যর মধ্যে পড়ে। ফলে , যুদ্ধরত এলাকার শিশুরা অপুষ্টি ও নানান রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি যোদ্ধা ও আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে শিশুদের ব্যবহারও উদ্বেগজনক।

শিশুদের উপর যুদ্ধ -সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় প্রভাব পরতে পাড়ে।তারা খুব কাছ থেকে গোলাগুলি, নির্যাতন, খুন প্রত্যক্ষ করায় মানসিকভাবে থাকে ভঙ্গুর। এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তারা খুব সহজেই যুদ্ধের সহজ টার্গেট পরিণত হয়েছে । তাই শিশুর ভবিষ্যৎ ও সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধ নিরসন খুবই জরুরি ।

আমাদের মনে রাখতে হবে ,যুদ্ধ- সংঘাত মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না । শান্তিপূর্ণ পৃথিবী শিশুদের প্রাপ্য ।শিশুদের মৌলিক অধিকারসমূহ পূরণ করে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ ও অঞ্চলকে গড়ে তুলতে হবে শিশুর জন্য শতভাগ নিরাপদ ।

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *