নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকায় মাদক নিরাময় মাইন্ড কেয়ারে এক নারী রোগীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,গত মঙ্গলবার (৩সেপ্টেম্বর) ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা মোঃ সালাম মিয়া তার মেয়ে মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা মোঃ সালাম মিয়ার মেয়ে তার পরিবারের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রতে কোনো চিকিৎসা নেই।
ওখানে মারধর করেই আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়। আতঙ্কে অনেক মাদকাসক্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন এছাড়াও এখানে কোনো নারী নার্স নেই। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজেই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তিনি আমাকে চিকিৎসা করা অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে থাকেন।
এঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানার এস আই মোঃ মাজেদ হোসেন রোগীকে দ্রুত উদ্ধার করেন। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান (সুমনের) হলি কেয়ার, মাইন্ড কেয়ার। স্বপ্নের মালিকানাও এই মোস্তাফিজুর রহমানের। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগী মৃত্যু ও নির্যাতনের অভিযোগও সবচেয়ে বেশি।
মাইন্ড কেয়ার থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়া এক রোগীর স্বজন বলেন, ২২ দিনে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। কিন্ত আমার মা সুস্থ হননি। তিনি সিজোফ্রোনিয়ায় আক্রান্ত। ভর্তির সময়ে মাইন্ড কেয়ারের লোকজন বলেছিল ৮ হাজার টাকা। ভর্তির পর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, ওষুধ, ডাক্তারের ভিজিট দেখিয়ে ৪৫ হাজার টাকা বিল করেছে।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড বাংলা বাজার এলাকার জব্বার মিয়া গলির বাসিন্দা মজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (সুমন) একজন প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা ও তার বিরুদ্ধে বরিশালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির অফিস ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া মামলার আসামী।
অভিযোগ উঠেছে বরিশালে মোস্তাফিজুর রহমান (সুমনের) আ’লীগেরর আমলে নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে সরকারি আইন উপেক্ষা করে নিজস্ব শক্তি বলয়ে নিজস্ব আইনে পরিচালিত করে আসছে মাদকাসক্ত মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার।
মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তার ট্রেড লাইসেন্স ও ফায়ার লাইসেন্স নেই এমনকি মহিলা রোগী রাখার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।ভূক্তভূগি পরিবারের কে মামলা বা অভিযোগ না করার জন্য নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে ভূক্তভুগীর বাবা আঃ সালাম মিয়া জানান আমরা মেয়েকে মাদকাসক্তি মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার থেকে নিয়ে আসছি।এখন অন্যত্র চিকিৎসা করাচ্ছি।আমাদেরকে মোস্তাফিজুর রহমান (সুমন) নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখাছে।
এছাড়াও মাদকাসক্তি কেন্দ্রের গুণগতমান সেখানে রক্ষা করা হয় না। রোগীদের খাবার সহ চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে দেওয়া হয় না। এখানে মালিক সিন্ডিকেট একই নামে তিন-চারটা লাইসেন্স করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের (আওয়ামী লীগ) প্রভাব তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও সুমনের প্রতারনা এখনো বহাল । এলাকাবাসীর দাবি প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে যেন আইন গত ব্যবস্থা গ্রহন করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন জানান মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার মাদক প্রথম দিকে লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনা করলেও দীর্ঘদিন ধরে নবায়ন করেনি।এখন তারা অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছে।আর নারী মাধকাসক্তদের রাখতে হলে সরকারি কিছু নিয়ম মেনে রাখতে পারবে।তারা করেনি আমরা দ্রুত উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে মাইন্ড কেয়ার ও হলি কেয়ার মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে উজিরপুরের গুঠিয়ার জাকির নামে এক রোগী মারাযান হলি কেয়ারে। ২০১৫ সালে একই প্রতিষ্ঠানে মারা যান নগরীর কাঠপট্টি এলাকার বাসিন্দা পুলক। ২০২১ সালে হলি কেয়ারের বাথরুম থেকে চন্দন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় কয়েকটি মৃত্যুর বিষয়ে পরিবার থেকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হন। পরবর্তীতে মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়।
এবিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এধরণের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই, যদি এধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।