TT Ads

 

 

নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যুগান্তরে প্রকাশিত খবরে জেলায় এসপি হিসাবে পদায়নের জন্য অনৈতিকভাবে ৫০ লাখ টাকা প্রদান ও পরে সে টাকা আদায়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিধি অনুযায়ী আব্দুল হান্নানকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য কোনো দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে না জানতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি।

জানা যায়, ২৫ আগস্ট এসপি আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগনামায় স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। ওইদিনই তাকে নরসিংদী থেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসাবে বদলি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গুরুতর এমন অভিযোগ গঠনের পর বরিশালে নতুন পদায়নকে ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বিভাগীয় মামলা করে। মামলা নং-১৭/ ২০২৫।

৬ এপ্রিল, ‘ওপেন ঘুস কারবার যার নেশা, বেসামাল নরসিংদীর এসপি’ শিরোনামে যুগান্তরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট পুলিশ সুপার হিসাবে নরসিংদীতে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত অভিযোগনামায় বলা হয়, ‘আব্দুল হান্নান নরসিংদী জেলায় যোগদানের আগে ২০২৩ সালে পুলিশ সুপার হিসাবে জেলায় পদায়ন পেতে রবিউল মুন্সী নামে একজনকে ৫০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে রবিউল মুন্সী এসপি হিসাবে পদায়নের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে আব্দুল হান্নান নরসিংদী জেলায় এসপি হিসাবে যোগদানের পর রবিউল মুন্সীর কাছ থেকে উক্ত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৯ নভেম্বর এসপির অধীনস্ত ডিবি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এসএম কামরুজ্জামান কর্তৃপক্ষের অনুমতি/ছুটি ছাড়াই ঢাকায় আসেন। তিনি রাজধানীর বিজয় সরণিসংলগ্ন মনিপুরী পাড়ায় রবিউল মুন্সীর অফিসে গিয়ে নগদ ৫ লাখ টাকা আদায় করেন। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধারের জন্য পুলিশ পরিদর্শক এসএম কামরুজ্জামান স্বহস্তে একটি লিখিত ডকুমেন্ট তৈরি করেন। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক রবিউল মুন্সীর স্বাক্ষর নেন। ওই ডকুমেন্টে এসপি আব্দুল হান্নানও গ্রহণকারী হিসাবে স্বাক্ষর দেন।

স্বরাষ্ট্র সচিবের অভিযোগনামায় এ বিষয়ে আরও বলা হয়, ৫ এপ্রিল দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক নেসারুল হক খোকনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের সময় আব্দুল হান্নান বদলিসংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ লাখ টাকা লেনদেন এবং টাকা উদ্ধারে অধীনস্ত পুলিশ সদস্যকে ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেন। যা সাক্ষ্য-প্রমাণে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়। পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া সরকারি বিধিবহির্ভূতভাবে অধস্তন পুলিশ সদস্যকে অবৈধ পন্থায় ব্যক্তিগত কাজে নিয়োজিত করেন এসপি। এসব বিষয় অপেশাদার ও অকর্মকর্তাসুলভ কর্মকাণ্ড, কর্তব্য কাজে অবহেলা, বিভাগীয় নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থি তথা অসদাচরণ এবং দুর্নীতি পরায়ণতার শামিল। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে এসপি আব্দুল হান্নানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(খ) এবং ৩ (ঘ) অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ (মিসকন্ডাক্ট) এবং দুর্নীতি পরায়ণতার (করাপশন) অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। একই বিধিমালার ৪(৩) এর উপ-বিধি(ঘ) অনুসারে কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে না তার লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে আব্দুল হান্নানকে। কৈফিয়তনামা পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে অভিযোগনামার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছেও। অভিযোগ বিবরণী এসপি আব্দুল হান্নানের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় পাঠিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও যুগান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার সত্যতা তুলে ধরা হয়।

 

TT Ads