করোনার মধ্যেও থেমে নেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তিতে অতিরিক্ত ‘ফি’ আদায়। প্রতি রোগীর কাছ থেকেই নির্ধারিত ভর্তি ‘ফি’র বাইরে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিচ্ছে তারা। এ নিয়ে বহুবার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ এবং প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও জরুরী বিভাগে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সচেতন মহল।
জানাগেছে, শেবাচিমে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রথমেই দরকার হয় সরকার নির্ধারিত ১১ টাকা মূল্যের ব্যবস্থাপত্র। পরে ভর্তি হওয়ার জন্য নিতে হয় সরকার নির্ধারিত ১৫ টাকা মূল্যের আরেকটি ফরম। সব মিলিয়ে সরকারিভাবে ভর্তি হতে একজন রোগীকে দিতে হবে ২৬ টাকা।
কিন্তু কাগজে কলমে নিয়ম এমনটি হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরেও প্রতি রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে আরও ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদাররা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিদিন গড়ে আড়াইশত রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। সে হিসেবে বছরে কয়েক লাখ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালে। বাৎসরিক হিসাব অনুযায়ী এসব রোগীদের কাছ থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছেন জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদাররা।
গত চার অক্টোবর রোববার থেকে বৃহস্পতিবার ৮ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ৪ অক্টোবর দেখাগেছে, ‘রোগীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তির দায়িত্বে থাকা রোগীরা। ভাংতি টাকা না থাকার অজুহাতে রোগী বা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে দুই দফায় অতিরিক্ত ২০-৩০ টাকা আদায় করছেন ব্রাদাররা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ‘টিকেট কাউন্টার থেকে ভর্তি ফি অতিরিক্ত নিলেও আমাদের কিছু করার নেই। আমরা অসহায়, আমাদের কাছে পাঁচ টাকার মূল্যও অনেক বেশি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব কিছু জেনেও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদারদের সাথে আলাপকালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কারোর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছি না। অনেক সময় ভাংতি না থাকায় কিছু রোগী টাকা না নিয়েই চলে যাচ্ছে। আবার কোন কোন সময় ভুলবশত বেশি টাকা রাখা হচ্ছে। তবে স্মরণে আসলে বা কোন রোগী দাবি করলে তাকে ফেরত দেয়া হচ্ছে।
তবে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসাররা। আলাপকালে একজন ইএমও বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তিনি জরুরী বিভাগের ইনচার্জ এর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জরুরী বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স (ব্রাদার) হরেকৃষ্ণ সিকদার বলেন, ‘অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমার জানামতে এখান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় হয় না। অভিযোগের সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেন হরে কৃষ্ণ সিকদার।
অপরদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের সাথে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত নই। তবে কেউ লিখিতভাবে আমার কাছে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে। আর সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।