ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর (অবসরপ্রাপ্ত) ড. শেখ আব্দুস সালাম। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো একটি ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর (অবসরপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. শেখ আব্দুস সালামকে ইবির ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০ এর ১০ (১) ধারা অনুসারে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। আগামী ৪ বছরের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

 

নতুন ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার উপর যে মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা সততা নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করব। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

 

 

খাদ্য সম্পর্কিত সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও প্রায়োগিক শিক্ষাই হলো খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান। সারাপৃথিবীতে-এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ খাদ্য ও পুষ্টি ছাড়া মানুষের জীবন কল্পনাও করা যায় না। পৃথিবীর সব চাহিদার মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা সবার আগে। তাই এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই। ক্লায়েন্টদের মাঝে পুষ্টি সচেতনতা তৈরি করাই মূলত একজন পুষ্টিবিদের কাজ। এটি একটি সেবামূলক পেশা।

 

আগে খাদ্য ও পুস্টি বিজ্ঞানেক্যারিয়ার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরণের অনিশ্চয়তা ছিলো। মনে করা হতো, এই বিভাগটি শুধু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভুল ধারণা ভেঙে গেছে। মেয়েদের পাশাপাশি এখন অনেক ছেলেরাও এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

যেখানে পড়া যাবে

 

উচ্চশিক্ষার বিষয় হিসেবে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে নাম ভিন্ন হলেও পড়ার বিষয়বস্তু মূলত একই রকম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি পড়ানো হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স পর্যায়ের কোর্স করানো হয়।

 

ভর্তি প্রক্রিয়া

শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে চাইলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসিতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে।

 

কাজের ক্ষেত্র

 

 

খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়ালেখা করে বিএসসি এবং এমএসসি পাসের পর দেশে এবং দেশের বাইরে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

আমাদের দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটসহ স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন খুব সহজেই। এছাড়াও বড় বড় ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিগুলো, ন্যাশনাল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট, ফিটনেস সেন্টার,এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট, ফুড সায়েন্স রিসার্চর, হোম ইকোনমিস্ট, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বড় বড় রেস্তোরাঁ, ক্যাটারিং সংস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে। আপনার কাজের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করবে কাজের ধরন কী রকম হবে।

 

আয় রোজগার

 

আমাদের দেশে এমনকি সারাপৃথিবীতে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ডিগ্রিধারীদের চাহিদা রয়েছে। বর্তমান সময়ে ডায়েটেশিয়ান এবং নিউট্রিশনিস্টদের চাহিদা অনেক। এছাড়া আপনি যদি এক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন, তাহলে চাকরির বাজারে বিভিন্ন পেশায় বেশ ভালো অঙ্কের বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। আপনিও চাইলে এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

ইংরেজি ওবেসিটি (Obesity) শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে স্থূলতা। স্থূলতা বলতে শরীরের এমন একটি বিশেষ অবস্থাকে বুঝায় যখন শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি জমে যায়।

বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি জীবনের শক্তি বা ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। আর এই ক্যালোরি আসে আমাদের দৈনন্দিন গৃহীত খাবার থেকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। মানুষ যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে তখন তা শরীরে চর্বি হিসেবে অব্যবহূত থেকে যায়। দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে শরীরে মেদ জমে যায়। ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায় এবং নানারকম জটিলতা দেখা দেয়।

 

সাধারণত স্থূলতা মাপার জন্য ‘বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই’ ব্যবহার করা হয়। কোনো ব্যক্তির ওজনকে কেজিতে এবং উচ্চতাকে মিটারে নিয়ে উচ্চতার বর্গ দ্বারা ওজনকে ভাগ করলেই ঐ ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই পাওয়া যায়। কারো বিএমআই ১৮.৫ এর নিচে হলে তাকে আন্ডারওয়েট বা কম ওজন বলা হয়। আর ১৮.৫-২৪.৯ বিএমআইকে স্বাভাবিক ওজন বলা হয়। অন্য দিকে ২৫.০-২৯.৯ বিএমআইকে ওভারওয়েট বা অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০.০ বা তার চেয়ে বেশি বিএমআইকে অতি স্থূলকায় বা অতিরিক্ত মোটা বলা হয়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, গত দুই দশকে বিশ্বে স্থূলতা বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। স্থূলতা এখন কোনো নিছক স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং এটি একটি রোগ। আর প্রতি বছর অন্তত ৩০ লাখের বেশি মানুষ এই রোগে ভুগে মারা যায়। তাই অনেক বিশ্লেষকই এটিকে ক্যানসার-এইডসের মতো বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি রূপে দেখছেন।

 

স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার কারণসমূহ:

 

১। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, ২। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস, ৩। বংশগত কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, জেনেটিক বা বংশগত কারণে স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যদি বাবা অথবা মায়ের যে কোনো একজনের স্থূলতা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা ৪০% এবং যদি উভয়ের স্থূলতা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা ৮০%। ৪। অ্যালকোহল, ৫। আয়েশি জীবনযাপন ইত্যাদি। তাছাড়া এন্টিডিপ্রেশন ও কর্টিকস্টোরয়েড জাতীয় কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও স্থূলতা দেখা দেয়।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশগুলোতে স্থূলতার হার অনেক বেশি। অপর দিকে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষেরা স্থূলতায় ভুগেন। আবার পুরুষের তুলনায় নারীর স্থূলতার হার তুলনামূলক বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও প্রযুক্তির প্রতি অতিনির্ভরশীলতাকে স্থূলতার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। বর্তমানে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ এবং সুযোগ—দুটোই কমে গেছে। আমাদের দেশের শতকরা ২০ ভাগ স্কুলেও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। শিশুরা প্রতিনিয়ত শারীরিক পরিশ্রম ও খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।

 

অপর দিকে অপরিকল্পিত আবাসন কাঠামো এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনও স্থূলতার জন্য দায়ী। শহরগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক পার্কের সংকট থাকায় মানুষজন প্রয়োজনীয় শরীর চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই গৃহিণী। দিনের অধিকাংশ সময় তারা শুয়ে-বসে বা টিভি দেখে কাটান। তারা খুব একটা শারীরিক পরিশ্রম করেন না বা করার সুযোগও পান না। ফলে স্থূলতায় আক্রান্ত হন।

 

স্থূলতা মানুষের শরীরে নানারকম জটিলতার সৃষ্টি করে। যেমন, উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, অথেরোসে্ক্লরোসিস,পালমুনারি ইনসাফিয়েন্সি ইত্যাদি। এছাড়া স্থূলতা মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রজননসংক্রান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। পরিসংখ্যান বলছে, স্থূলতায় আক্রান্ত রোগীরা প্রায়শই মানসিক হীনমন্যতায় ভুগেন।

 

বর্তমান সময়ে স্থূলতার এই ‘মহামারি’ ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত শরীরচর্চার ও পরিমিত খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। যে কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ’। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট।

 

 

আশঙ্কার কথা, ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 

নীতিমালার অভাবে ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সব ধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

গাছের মূল নাম বহেড়া বা অক্ষ হলেও এর স্থানীয় নাম বয়ড়া। এই গাছটি সাধারণত বনজ জাতীয় গাছ। এই গাছ রোপনের দরকার হয় না। পতিত জমির ধারে, জমির আইলে এটি আপনা-আপনি জন্মে। আমাদের দেশের কোনো কোনো অঞ্চল এবং ভারতের ছোটনাগপুর, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে প্রধানত এ গাছ বেশি দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া ও বর্ধমানের শালবনেও এই গাছ প্রচুর জন্মে।

 

এই গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো ফল ও বাকল। বহেড়া গাছ বেশ বড় হয়। এই গাছ উচ্চতায় ৩০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের গুড়িও বেশ লম্বা। এর বাকল ধূসর-ছাই রঙের। পাতা কাঁঠাল পাতার মতো মোটা এবং লম্বায় প্রায় ৫ ইঞ্চি। এর ফুল ডিম্বাকৃতির প্রায় ১ ইঞ্চির মতো লম্বা এবং ফল গোল ও ডিম্বাকৃতি—এই দু’রকমের হয়। কাঁচা পাকা বহেড়া ফলের রঙ সবুজ থাকে। পেকে গেলে শুরুতে লাল হয় এবং পরে শুকিয়ে ক্রমশ বাদামী হয়। ফলের বাইরের আবরণ মসৃণ ও শক্ত এবং ভেতরে একটি মাত্র শক্ত বীজ থাকে। গ্রীষ্মকালে এই গাছে ফুল আসে। তারপর ফল হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এর ফল পেকে যায় এবং ফল পুষ্ট হলে বোঁটা থেকে খসে পড়ে। এর ফল ও ফলের শাঁস ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয়। এখানে বহেড়ার কিছু ওষুধি গুণাগুণ তুলে ধরা হলো—

শরীরের ফুলো কমাতে :শরীরের কোনো স্থানে ফুলে গেলে বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে শুধু ছাল বেটে একটু গরম করে নিয়ে ফুলো জায়গায় প্রলেপ দিলে ফুলো কমে যায়।

 

কৃমি দূর করতে :বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে শাঁসের গুড়া ডালিম পাতার রসের সঙ্গে মিশিয়ে টানা কয়েকদিন খেলে কৃমি দূর হয়।

 

শ্বেতী রোগ সারাতে :বহেড়ার বিচির মধ্যে থাকা শাঁসের তেল বের করে নিয়মিত শ্বেতীর ওপর লাগালে গায়ের রং কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

 

সর্দি-কাশি নিরাময়ে :গরম ঘিয়ে বহেড়ার গুঁড়ো মিশিয়ে গরম করে খেলে সর্দি-কাশি নিরাময় হয়। বিশেষ করে আধা চা চামচ বহেড়া-চূর্ণ ও ঘি একসঙ্গে গরম করে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে কাশি উপশম হয়।

 

অকালে চুল পাকলে :এক্ষেত্রে প্রথমে বহেড়া ফলের বিচি বাদ দিয়ে শুধু খোসা নিয়ে পানি দিয়ে ভালোভাবে মসৃণ করে বেটে নিতে হবে। তারপর এক কাপ পানিতে গুলে পানি ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটুকু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করলে চুল ওঠা বন্ধ হবে।

 

ইন্দ্রিয়ের দুর্বলতা সারাতে : ইন্দ্রিয়ের দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন দুটি করে বহেড়ার বিচির শাঁস খেতে হবে। যথাযথ ফল পেতে টানা কয়েক সপ্তাহ খেতে হবে।

 

শ্লেষ্মা রোগে :শ্লেষ্মা রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত আধা চা-চামচ বহেড়ার গুঁড়া ঘিয়ে গরম করে মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। তৈরি করা মিশ্রণটির সঙ্গে গরম করা মধু মিশিয়ে চেটে খেতে হবে।

 

আমাশয় সারাতে :আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চামচ বহেড়ার গুঁড়া মিশিয়ে টানা দুই সপ্তাহ খেতে হবে।

 

অকালে টাক রোধে :বহেড়ার বিচির শাঁস সামান্য পানিতে খুব মিহি করে পিষে বা বেটে চন্দনের মতো টানা কয়েক মাস টাকে লাগালে টাক সেরে যায়।

ঝরঝরে ও তরতাজা ত্বকে যে কোনো সাজই সুন্দর দেখায়। রূপ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ত্বক সজীব রাখার সহজ ও কার্যকরী উপায় নিয়ে লিখেছেন লোপা চৌধুরী।

 

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তৈরি হওয়া ফ্যাকাশে ত্বক কারোই কাম্য নয়। আপনার ত্বক এমনকি পুরো শরীরের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন প্রতি রাতে গড়ে ৮ ঘণ্টা ঘুম। তাই সুস্থ-সুন্দর থাকতে ভালো না লাগলেও রাত জেগে টেলিভিশন না দেখে বা অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে চেষ্টা করুন একটা ভালো ঘুম দেওয়ার।

 

 

 

প্রতিদিন সাবান ব্যবহারে আপনার ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। তাই একটি ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন, যা আপনার ত্বককে রুক্ষতা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। প্রতিদিন গোসলের পর মনে করে লোশন লাগান, এতে আপনার ত্বক ভালো থাকবে। যদিও আপনি এখন আর ছোট নন, তবুও আপনার শরীরের পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এখনো জরুরি। প্রতিটি মানুষেরই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

 

 

 

ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করবে, আর জিঙ্ক ত্বককে বিকিরণ থেকে রক্ষা করবে। প্রতিদিন সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার ইউভিএ/ইউভিবি রশ্মির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে আপনার ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ত্বকের রঙের বদল ও অস্বাভাবিক আঁচিল ত্বকের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ এবং একটু সতর্কতা খুব সহজেই আপনাকে এই রোগটির হাত থেকে দূরে রাখতে পারে। আপনার একটু সচেতনতাই আপনাকে দিতে পারে সুস্থ-সুন্দর ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ জীবন।

 

 

 

ঘরে বসেই কীভাবে আপনার ত্বকের পরিচর্যা করবেন, তার পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো।

 

 

 

ঘরোয়া ফেসপ্যাক

 

 

 

ড্রাই স্কিন

 

 

 

হানিপ্যাক :ডিমের কুসুমের সঙ্গে আধা চামচ মধু, ১ চা চামচ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

 

 

১ চা চামচ অরেঞ্জ জুসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। ত্বক নরম রাখতে এর কোনো জুড়ি নেই।

 

 

 

ক্যারট মাস্ক :গাজর, বাঁধাকপি ও ওলকপি একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। সিদ্ধ হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিন। মুখ ধোয়ার জন্য এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। বাকি ভেজিটেবল ম্যাশ করে নিন এবং ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, বাঁধাকপিতে প্রচুর মিনারেল। ওলকপি পাওয়ারফুল ক্লিনজার। শুষ্ক ত্বকের জন্য এই কম্বিনেশন খুবই উপকারী।

 

 

 

গাজর কুড়ে নিন। তারপর কোড়ানো গাজর মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

 

 

 

অয়েলি স্কিন

 

 

 

হানিপ্যাক :১ চামচ মধুর সঙ্গে ১ চামচ দই আর সামান্য হলুদ মিশিয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটা দারুণ।

 

 

 

ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে আধ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ লেবুর রস, মুলতানি মাটি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

 

 

সেনসিটিভ স্ক্রিন

 

 

 

ওটমিল প্যাক :ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করার জন্য চাই আধ কাপ সিদ্ধ ওটমিল, ১টা ডিমের সাদা অংশ, ১ চা চামচ লেবুর রস ও ম্যাশড আপেল আধা কাপ। এসব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সক্ষম ভ্যাকসিন আসলেও আগামী বসন্তে মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক হবে না বলে সতর্ক করেছেন একদল বিজ্ঞানী। অথচ এই ভ্যাকসিনকেই সবচেয়ে কাঙিক্ষত বস্তু হিসেবে দেখা হয়; যা মহামারিকে নির্মূল করবে। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটির মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে একদল বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এক প্রতিবেদনে বলছেন, ভ্যাকসিন কতটুকু কি করতে পারে এবং কবে নাগাদ; এ সম্পর্কে বাস্তববাদী হওয়া প্রয়োজন আমাদের। ভ্যাকসিন আসতে এক বছর সময় লাগতে পারে, ফলে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করতে হবে বিধিনিষেধগুলো।

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা দুই শতাধিক সম্ভাব্য করোনা ভ্যকসিন তৈরি করেছে। কার্যকর ও সুরক্ষিত কিনা তা নিয়ে চলছে নানা স্তরে পরীক্ষা-নিরিক্ষা। বেশি কিছু রয়েছে পরীক্ষার শেষ ধাপে। কাজটি হচ্ছে তুমুল গতিতে।

প্রখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ন্যাশনাল হার্ট ও লাঙ ইনস্টিটিউটের ডা. ফিওনা কুলে ভ্যাকসিন নিয়ে আশার বাণী শোনালেও সতর্ক করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘মহামারির অবসানে একটি কার্যকর ভ্যকসিন অত আশা জাগানোর বিষয়, কিন্তু আমরা জানি ভ্যাকসিন তৈরির ইতিহাস নানা রকম ব্যর্থতায় পূর্ণ।’

ব্রিটিশ সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছাড়াও অনেকে আশাবাদী যে, চলতি বছরের মধ্যেই কিছু মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন এবং আগামী বছরের শুরুতেই গণহারে ভ্যাকসিন দেয়ার কাজটি শুরু হবে। কিন্তু রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান অধ্যাপক নিলয় শাহ বলছেন, ‘যদি একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আসেও তার মানে এই নয় যে কয়েক মাসের মধ্যে সবাই ভ্যাকসিনটি পেয়ে যাবে। সহসাই যে সব স্বাভাবিক হবে এমনটা নয়। সামনে আমাদের আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’

আরএনএ ভ্যাকসিনের মতো পরীক্ষামূলক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও এমন ভ্যাকসিন গণহারে উৎপাদনের অভিজ্ঞতা বিশ্বের নেই। এ ছাড়া ভ্যাকসিনের কাচামাল এবং ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিছু ভ্যাকসিন সংরক্ষণে প্রয়োজন মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।

ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চার্লস ব্যাংহাম বলছেন, ‘আমরা জানি না কবে একটি কার্যকর করোনা ভ্যাকসিন আসবে এবং কতটা কার্যকর হবে। এর চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কত দ্রুত এটা সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। যদি কার্যকরী হয়ও তাহলেও সহসাই জীবন স্বাভাবিক হচ্ছে না।’

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ সময় দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ থাকবে। তবে কওমি মাদরাসার ক্ষেত্রে ছুটি কার্যকর হবে না।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়েরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি করোনার কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। উল্লিখিত সময় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে গতকাল বুধবার শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর কথা জানান। এর একদিন পরে নতুন করে আরও এক মাস ছুটি বাড়ানো হলো।

দীপু মনি বলেছিলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে বর্তমান ছুটি আরও বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কতদিন ছুটি বাড়ানো হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ থাকবে। এ সময়ে নিজেদের এবং অন্যদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করবে। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা ও অনুশাসনসমূহ শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে কয়েক ধাপে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে নতুন করে এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এ পরীক্ষা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তবে পূর্ণ নম্বর কমিয়ে সব বিষয়েই পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিদিন একটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে এ ব্যাপারে বোর্ডগুলোকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনে দুটি বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রতি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর কমানোর প্রস্তাব আছে। সেক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক নেই সেগুলোতে বহুনির্বাচনী ও সৃজনশীল উভয় অংশের পূর্ণমাণ থেকে ৫০ শতাংশ করে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যেগুলোতে ব্যবহারিক আছে সেগুলোতে ব্যবহারিক নম্বর ঠিক রেখে অবশিষ্ট অংশের (এমসিকিউ ও সৃজনশীল) নম্বর সমন্বয় করে পূর্ণ নম্বর ৫০ শতাংশ কমানো হবে।

অপর প্রস্তাবে কেবল এমসিকিউ কিংবা সৃজনশীল অংশের যেকোনো একটির পরীক্ষা নেয়ার বিষয় আছে। এ ক্ষেত্রেও ব্যবহারিকের নম্বর ঠিক রেখে বাকি অংশের ওপর নম্বর সমন্বয় করা হবে। করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিজ নিজ কলেজকে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব গ্রহণ করবে সেটি বোর্ডগুলো বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার সময় কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, পরীক্ষার খসড়া রুটিন এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে তারিখ ঘোষণার পর পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করা হবে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ড চেয়ারম্যানদের বৈঠকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে মতামত দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে নতুনত্ব আনার চিন্তা রয়েছে। সেটি হচ্ছে, দৈনিক একটির বেশি পরীক্ষা না রাখা এবং প্রত্যেক দিনই পরীক্ষা নেয়া। স্বাভাবিক সময়ে মূল বিষয়গুলোর পরীক্ষার পরে বিভাগভিত্তিক সকালে ও বিকেলে দুটি করে পরীক্ষা রাখা হতো। ফলে সকালে বিজ্ঞানের পরীক্ষা হলে বিকেলে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষার পরীক্ষা নেয়া হতো। একটি পরীক্ষার পরে কেন্দ্র পরিষ্কারের বিষয়টি সামনে রেখে দৈনিক একটি রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে ধর্মীয় ও সাপ্তাহিক ছুটি বাদে অন্যসব দিন পরীক্ষা নেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, পরীক্ষার কেন্দ্র ও সিটপ্ল্যান ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থীদের ‘জেড’ আকারে বসানো হবে। সে হিসেবে প্রথম বেঞ্চে একপাশে একজন বসালে আরকেজনকে দ্বিতীয় বেঞ্চে অপর পাশে বসানো হবে। তৃতীয় বেঞ্চে বসানো হবে দ্বিতীয় বেঞ্চের বিপরীত পাশে। এই প্রক্রিয়ায় আসন ব্যবস্থা করতে গিয়ে কেন্দ্র সংখ্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে ৬৫০ জন করে পরীক্ষার্থী আছে।

আরেকজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে সব সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ছাপানো শেষ করে মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু মার্চের শেষ সপ্তাহে মাদরাসা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ছাপানো শেষ হয়। লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রশ্নপত্র এতদিন প্রেসে সংরক্ষিত ছিল। এ সপ্তাহে প্রশ্নপত্র পাঠানো শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ছাপানো প্রশ্নেই পরীক্ষা নেয়া হবে। যদি সরকার আংশিক নম্বরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সকালে কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হবে। সে অনুযায়ী তারা শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক  বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে বোর্ডগুলো সার্বিকভাবে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মঙ্গলের বিষয়টি সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করা হলে এই ব্যাচ ভবিষ্যতে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তাই পরীক্ষা হবে। কিন্তু বিষয় কমানো হবে না পূর্ণ নম্বর কমবে– সে রকম একাধিক বিকল্পই আছে। পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জন মারা গেছেন। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫০৮ জন।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে পুরুষ ১৬ ও নারী পাঁচজন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ১৮ ও বাড়িতে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ হাজার ২৭২ জনে।

করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ পরীক্ষাগারে ১১ হাজার ৪১০টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৪২০টি। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৫০৮ জন। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল তিন লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৭ জনে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৯১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৭৭ হাজার ৭৮ জনে।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। রোগী শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৭৫ দশমিক ৯১ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৭৯ (৭৭ দশমিক ৩৮শতাংশ) ও নারী এক হাজার ১৯৩ জন (২২ দশমিক ৬২ শতাংশ)।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ২১ জনের ম‌ধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১৪ জন।

বিভাগ অনুযায়ী মৃত ২১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১, চট্টগ্রামে তিন, রাজশাহীতে পাঁচ এবং রংপুর বিভাগে দুইজন র‌য়ে‌ছেন।