TT Ads

 

নিজস্ব প্রতিবেদক //

বরিশালের পোর্ট রোডের শহীদ জিয়া পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে যখন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন সেই পবিত্র আয়োজনের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ছায়া নেমে আসে। দোয়া শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনার ঝড়। কারণ—এই আয়োজনের সারিতে দেখা গেল সরকারি দলের পরিচিত কয়েকজন নেতাকর্মীকে।

যে উপস্থিতি দোয়া মাহফিলকে বিতর্কে ফেলল

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সদ্য কারামুক্ত বরিশাল মহানগর মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি ইয়ার সিকদার। যিনি “বিএনপি’র করা একাধিক মামলার আসামি” বলে পরিচিত। আরও ছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা রাকিব, যিনি “নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলা মামলার আসামি” হিসেবে এলাকায় পূর্ব থেকেই আলোচিত।
এই দুই নেতার উপস্থিতি বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে শুধু ক্ষোভই ছড়ায়নি, বরং দলীয় শুদ্ধি ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নও তুলেছে।

ফেসবুকে ক্ষোভের বিস্ফোরণ

বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চিশতী সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে লিখেন—
“১৭ বছর ধরে আ’লীগের অপকর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দোয়ায় উপস্থিত হয়? কার ইন্ধনে এরা দলে অনুপ্রবেশ করছে?”
তার স্ট্যাটাসে ক্ষোভ যেন চুঁইয়ে পড়ছিল। শুধু একজনের প্রশ্ন নয়—স্থানীয় অনেক নেতারই একই উদ্বেগ: এইসব রাজনৈতিক ছদ্মবেশীরা দলে ঢুকে যে ক্ষতি করছে, তা কি কেউ বুঝতে পারছে না?

ছবিতে দেখা যায়, বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতা কামাল সিকদারের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন ইয়ার সিকদার, আর সামনে শ্রমিক লীগ নেতা রাকিব। দৃশ্যটি অনেকের মনেই অসন্তোষের আগুন আরও উসকে দিয়েছে।

‘ভুল হয়েছে’—ছোট কামালের স্বীকারোক্তি

মহানগর বিএনপি নেতা ছোট কামাল বলেন,
“ওরা পোর্ট রোডের আড়তদার—এই পরিচয়ে দোয়ায় এসেছে। কাউকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারি না। তারপরও আমার ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না।”
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এমন সংবেদনশীল আয়োজনে সাধারণ আড়তদার পরিচয় কি যথেষ্ট? নাকি এর আড়ালে অন্য কোনো পরিকল্পিত অনুপ্রবেশের ছায়া রয়েছে?

দলের ভেতরেই নতুন বিতর্ক: ‘স্বঘোষিত সভাপতি’

বরিশাল মহানগর মৎস্যজীবী দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাম সিকদার অভিযোগ করেন—
“আমি দোয়া মোনাজাতে দাওয়াত পাইনি; অথচ সেখানে আ’লীগ নেতাদের নিয়ে দোয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান সরোয়ারের উপস্থিতিতে “ইয়ার সিকদারের ভাই আজাদ সিকদার নিজেরাই ব্যানার সাটিয়ে স্ব-ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করেছে”, যেখানে ছোট কামালও ছিলেন সহযোগী।
সালাম সিকদার এটিকে দলের ভেতরে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত অনুপ্রবেশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

মহানগর বিএনপির কড়া অবস্থান

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন—
“আ’লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে কেউ যদি কোনো প্রোগ্রাম করে, তা দলের সাংগঠনিক বিধির বাইরে। তথ্য-প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“কেউ অনধিকারভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করলে তা হাইকমান্ডকে জানানো হবে।”

দলের জন্য ক্ষতির বার্তা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক রং বদলানো কিছু ব্যক্তির এভাবে দলীয় কর্মসূচিতে ঘেষাঘেষি করা শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায় না, বরং বিএনপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দুটোই ঝুঁকিতে ফেলে। ইতিহাস বলছে—অনুপ্রবেশ রাজনৈতিক দলকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে।
এই ঘটনার পর অনেকেরই প্রশ্ন:
দলের দুর্বলতা কোথায়? কে দিচ্ছে সুযোগ? আর কতদিন এমন প্রবেশে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

শেষ কথা

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির দোয়ায় সবার অংশগ্রহণই কাম্য—কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে পরিকল্পিতভাবে দলে অনুপ্রবেশ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
সতর্কতা, সংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ এবং যোগ্য নেতৃত্বই পারে এই ধরণের অপপ্রয়াসকে থামিয়ে দিতে

TT Ads