আসাদুজ্জামান শেখ |

সারা দেশে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন শোক ও ক্ষোভে উত্তাল জনমত, ঠিক সেই সময়ে বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা–কড়াপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে নতুন অফিস উদ্বোধনের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন এক থেকে দেড়শ লোকের অংশগ্রহণে খিচুড়ি পার্টির আয়োজন করা হয়, যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে আনন্দ আয়োজন করে তারা শহীদ হাদির আত্মার মাগফিরাত ও দোষীদের বিচারের দাবির প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন।

এই আয়োজনে ইউপি সদস্য নাঈমকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন সোহাগ কাজী, মানিক হাওলাদার, ফিরোজ তালুকদার, বাদু সোলনা, কাউসার খলিফা, জাহাঙ্গীর মল্লিকসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি।

এ বিষয়ে মানিক হাওলাদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে অফিস উদ্বোধনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি মিলাদ মাহফিল হবে।” তিনি আরও স্বীকার করেন যে এক থেকে দুইশ লোকের জন্য খিচুড়ির আয়োজন করা হয়েছে। এটি কিসের আয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মিলাদের জন্যই এই ব্যবস্থা।”

অন্যদিকে ইউপি সদস্য নাঈম বলেন, “বিএনপির একটি অফিস উদ্বোধনের কথা ছিল, যেখানে সাবেক চেয়ারম্যান আমিন ভাইয়ের ছোট ভাই মিলন ভাই উপস্থিত থাকার কথা ছিল।” তবে তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং সবকিছু মানিক হাওলাদার ও সোহাগসহ ১০–১২ জন ব্যক্তি আয়োজন করেছেন। প্রশ্ন করা হলে কেন হাই কমান্ডের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করা হলো—এ বিষয়ে তিনি কোনো স্পষ্ট জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি মাদারীপুরে ছিলেন, যদিও স্থানীয়দের মতে তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, এই আয়োজনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একাধিক ব্যক্তি অর্থসহায়তা করেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য ও মুঠোফোনের কল রেকর্ডিং প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, “আমরা বর্তমানে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে ব্যস্ত। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কোনো অনুষ্ঠান বা অফিস উদ্বোধনের প্রশ্নই আসে না।” তারা আরও বলেন, “যদি দলের কেউ এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তারা বিএনপির আদর্শের প্রতিনিধি নন। আমরা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে রয়েছি, যাতে হাদির পরিবার ন্যায়বিচার পায়।”

ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে নজর রাখছেন রাজনৈতিক মহল।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক //
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারেকের নেতৃত্বে আয়োজিত এই মিছিলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছাত্রদল নেতা শাকিব, সোহেল ও বেলালসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে মিছিলটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নির্ধারিত স্থানে এসে সমবেত হন। পরে জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলটি বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল চলাকালে “মহান বিজয় দিবস অমর হোক”, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ”, “শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”—এমন নানা স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

মিছিল শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারেক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,
“১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের স্মরণ করি।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রসমাজ সবসময় দেশের ক্রান্তিকালে নেতৃত্ব দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। মহান বিজয়ের চেতনাকে ধারণ করে একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছাত্রদলের প্রধান লক্ষ্য।”

কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা মহান বিজয় দিবসের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে মিছিলটি সম্পন্ন হওয়ায় নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই আয়োজন।

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের এই বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল মহান বিজয় দিবস উদযাপনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। শিক্ষার্থীদের কাছে বাস ভাড়ার নামে আদায় করা ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। শুধু তাই নয়; পরীক্ষার আপ্যায়নে একদিনে কেবল খাসির মাংসের বিল করা হয়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি। এসব অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান এবং উপপরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) মো. শহিদুল ইসলাম আমিনুল ইসলামের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদন্ত করে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি মোট ২১টি অভিযোগ পর্যালোচনা করে বিস্তারিত নথি, ভাউচার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বক্তব্যের ভিত্তিতে যাচাই করে প্রায় সবগুলো অভিযোগ সত্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান (বর্তমান মাউশির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মাউশির কাজ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া। আমরা তা করেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে।’

কলেজের মাইক্রোবাস শহরের ভেতরে ব্যবহৃত হলেও মাত্র তিন মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকারও বেশি পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে। পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের তুলনায় আমিনুল ইসলাম এ খাতে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। এত বিপুল পরিমান জ্বালানি ও মেরামত ব্যয় কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির খরচ কলেজের নামে ভাউচার করা হয়েছে। পরিবহন খাত থেকে পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ তিন মাসে উত্তোলন করেছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৯২ টাকা, আর বর্তমান অধ্যক্ষ একই সময়ে উত্তোলন করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

পরিবহন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীপ্রতি বিবিধ খাতে ১০০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় দ্বিগুণ ফি নিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা বাড়তি আদায় করেন। এসব টাকা তার ব্যক্তিগত গাড়ির তেল, সিএনজি গ্যাস, ড্রাইভারের বেতনও কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজের মাইক্রোবাস শহরের ভেতরে ব্যবহৃত হলেও মাত্র তিন মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকারও বেশি পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে। পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের তুলনায় আমিনুল ইসলাম এ খাতে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। এত বিপুল পরিমান জ্বালানি ও মেরামত ব্যয় কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির খরচ কলেজের নামে ভাউচার করা হয়েছে।

এক হায়েসের পেছনেই বছরে ব্যয় ৬২ লাখ, দেড় লাখ হয়েছে মাউশি ডিজির একদিনের আপ্যায়ন বিল

মাইক্রোবাসের জ্বালানির ভাউচার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে ৩৩ হাজার ৬৩ টাকা, অক্টোবরে ৪১ হাজার ৫০৫, নভেম্বরে ৫৩ হাজার ৪১, ডিসেম্বরে ৭৩ হাজার ৩০১, জানুয়ারিতে ৭১ হাজার ৭৫৪, ফেব্রুয়ারিতে ৮০ হাজার ৯৭৮, মার্চে ৬৮ হাজার ৭৩ এবং এপ্রিলে ৫৬ হাজার ৫৮৫ টাকার ভাউচার করা হয়েছে। কলেজের মাইক্রোবাস মূলত শহরের ভেতরেই চলাচল করে। এ অবস্থায় এত বিপুল জ্বালানি খরচ কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষ যেখানে চার মাসে মোট ৩১১ লিটার অকটেন ব্যবহার দেখিয়েছিলেন, আমিনুল ইসলাম তিন মাসেই ৯৫২ লিটার তেল খরচ দেখিয়েছেন। এসব কিছুই তিনি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে করেছেন।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণেও অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া যায়। পরিবহন খাত থেকে পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ তিন মাসে উত্তোলন করেছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৯২ টাকা, আর বর্তমান অধ্যক্ষ একই সময়ে উত্তোলন করেন ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৬ টাকা। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে একই খাত থেকে উত্তোলন করা হয় ৩৫ হাজার ৪১৭, ৮৮ হাজার ৯০৪, ১ লাখ ২২ হাজার ৬৭৮, ৩০ হাজার ৯৫০, ৫৮ হাজার ৭৫, ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি, ৩৩ হাজার ৯৩৮, ৬৩ হাজার ৫২০, ২২ হাজার ৯৬১, ২৪ হাজার ৩৫ এবং ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৫ টাকা। এই ব্যয় কলেজের মাইক্রোবাসের পরিচালন ব্যয় হতে পারে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ব্যক্তি খাতে এস অর্থ ব্যয় করেছেন। পরবর্তী ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে এটি সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করেছেন।

ভর্তি ফি ও পরীক্ষার খাত থেকে ভুয়া বিল-ভাউচারে টাকা আত্মসাৎ
উচ্চমাধ্যমিক ভর্তি ফি, অনার্স ২য় বর্ষ, মাস্টার্স শেষবর্ষ, অনার্স ১ম বর্ষসহ বিভিন্ন পরীক্ষার আয়-ব্যয়ের খাত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক হারে খরচ দেখানো হয়েছে। খাসির মাংসের ক্ষেত্রে একদিনেই এক লাখ ৫৫ হাজার ৬০৪ টাকা ব্যয়ের ভাউচার করা হয়েছে। অনার্স ২য় বর্ষ পরীক্ষা-২০২৩ খাতে এ ব্যয় দেখানো হয়েছে।

২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তি বাবদ শিক্ষাবোর্ড থেকে ৯১ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ পায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ। ব্যয়ের ভাউচারে দেখা যায়, তিনটি ছোট খাতে ৩ হাজার ৫৫০, ২ হাজার ২০০ এবং ৩০ জন কর্মচারীকে জনপ্রতি ২ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়ে মোট ৮৫ হাজার ৫০৮ টাকা দেখানো হয়েছে। তবে ৬ সদস্যের মনিটরিং কমিটিকে কোনো সম্মানী দেওয়া হয়নি। কেবল ৩০ কর্মচারীর নামে পুরো টাকার ভাউচার করা হয়েছে। যা অস্বাভাবিক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা থেকে কলেজের আয় হয় ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। এ অর্থ পরীক্ষা পরিচালনা বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। উত্তরপত্র বাবদ ৫৬ হাজার ৭৬০ এবং ডিউটি বাবদ ৩৪ হাজার ৮১৩ টাকা। এর বাইরে আপ্যায়ন খাতেই একাধিক আশ্চর্যজনক ভাউচার পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ৬ জুনের ভাউচারে ব্রয়লার মুরগি ৫ হাজার ৮০০ টাকা, ইলিশ-রুই মাছে ৩১ হাজার, খাসি ১৬ হাজার ৫০০, পরীক্ষা সামগ্রীতে ১১ হাজার ২৬৫ এবং একই মাসে অপর দুটি তারিখে আপ্যায়ন বাবদ ৪৭ হাজার ৭৮০ টাকা, ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯৫ ও ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এই সময় সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম দায়িত্বে না থাকলেও ভাউচারগুলো তিনি অনুমোদন করেছেন। ফলে পুরো ব্যয়ই সাজানো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনার্স কেন্দ্র ফি খাতেও অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। তিন হাজার ৬৪৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কেন্দ্র ফি হিসেবে পাওয়া ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬০ টাকা। ২০২৪ সালের ১১ আগস্টের ভাউচার অনুযায়ী একদিনের আপ্যায়নে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭০ টাকা।

মাস্টার্স শেষপর্ব পরীক্ষার অভ্যন্তরীণ তহবিলে আয় ছিল ৭ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা। পরীক্ষা পরিচালনা ৫ লাখ ২৮ হাজার, উত্তরপত্র ৬০ হাজার ৯৩০ এবং ডিউটি বাবদ ৫৬ হাজার ৫৫ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৪ মাত্র একদিনেই আপ্যায়নে খরচ দেখানো হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৭০ টাকা। যা অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে কমিটি। একইভাবে মাস্টার্স কেন্দ্র ফি আয় ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫০ টাকার মধ্যে ব্যয় দেখানো হয় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬০ টাকা, যেখানে একদিনের আপ্যায়ন খরচ থাকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪১২ টাকা দেখানো হয়েছে।

সরকারি কলেজের সেই অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হলো

সবচেয়ে আলোচিত ভুয়া ভাউচার পাওয়া গেছে অনার্স ২য় বর্ষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে। এ পরীক্ষায় কলেজের মোট আয় ছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ টাকা, যার ১১ লাখ ৯৫ হাজারই পরীক্ষা পরিচালনা খাতে ব্যয় দেখিয়েছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম। এ ব্যয়ের মধ্যে ডিসি অফিস ৩০ হাজার, ট্রেজারি ২৫ হাজার, সিভিল সার্জন ২০ হাজার, পোস্ট অফিস ২৫ হাজার, মেডিকেল সহকারী ২০ হাজার, ভেন্যু পরিচালনা ৫০ হাজার, সকল কর্মচারী ৩ লাখ ১০ হাজার, কুলি মজুরি ৩৫ হাজার, লেবার বিল ১ লাখ, বেঞ্চে সিট লাগানো ১ লাখ ৩০ হাজার, পুলিশ রিকশাভাড়া ১৯ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। এ পরীক্ষা চলাকালীন ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুধু একদিনে আপ্যায়ন ও খাসির মাংস বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬০৪ টাকা।

অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষায় আয় ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যয়ের মধ্যে পরীক্ষাকক্ষের ১১ দিনের কর্মচারী পারিশ্রমিকই দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। ডিসি-ট্রেজারি-পোস্ট অফিসের পিয়নদের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭২ হাজার, বেঞ্চ সাজানো ৬৬ হাজার ৫০০, সিট লাগানো ৫৫ হাজার ৭০০ এবং আপ্যায়ন হিসাবে দেখানো হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ ব্যয়গুলোর ক্ষেত্রে তৈরি করা ভাউচারগুলোও ভুয়া বলে জানা গেছে।

গত ১৯ জুন মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে যান। মাউশি ডিজির আপ্যায়ন এবং উপহারের কথা বলে কলেজের ১৭টি বিভাগ থেকে ৫১ হাজার টাকা নেন আমিনুল ইসলাম। এছাড়া কয়েকটি কলেজ থেকে অর্ধ লাখ করে টাকা নেন তিনি। এই টাকা মাউশি ডিজির আপ্যায়নে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেছেন আমিনুল ইসলাম।

পরিবহনহীন কলেজে পরিবহন ফি আদায় ৭০ লাখ, পুরোটাই আত্মসাৎ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে পরিবহন ফি নেওয়া আদায় করেন আমিনুল ইসলাম। এই খাতে উত্তোলিত অর্থের পরিমান ৭০ লাখ টাকা। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজে পরিবহন না থাকায় এ ফি আদায়ের যৌক্তিকতা নেই এবং অর্থ ব্যয়ের কোনো বৈধ খাতও নেই। ফলে যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে তার পুরোটাই অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করেছেন।

মাউশির মহাপরিচালকের আপ্যায়নের নামে তোলা টাকা আত্মসাৎ
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ১৯ জুন মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে যান। মাউশি ডিজির আপ্যায়ন এবং উপহারের কথা বলে কলেজের ১৭টি বিভাগ থেকে ৫১ হাজার টাকা নেন আমিনুল ইসলাম। এছাড়া কয়েকটি কলেজ থেকে অর্ধ লাখ করে টাকা নেন তিনি। এই টাকা মাউশি ডিজির আপ্যায়নে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেছেন আমিনুল ইসলাম।

প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ, নায়েম ভবনে দেখা করার প্রস্তাব প্রতিবেদককে
এসব অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে নেই। আমাকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বদলি করা হয়েছে। আমার চাকরিই আছে আর কয়েকবছর। আমি শিগগিরই ঢাকা যাব। দেখা করে কথা বলব।’

 

 

 

বরিশালের কাউনিয়া হাউজিং এলাকায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দুইটি অটোরিকশা ও টেম্পু পার্সের দোকান। রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের দিকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো দোকান দুটিকে গ্রাস করে ফেলে।

পুড়ে যাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান হলো দয়াল খাজা অটোরিকশা পার্সের দোকান এবং দয়াল খাজা অটো টেম্পু পার্সের দোকান। উভয় দোকানের মালিক শামিম শরিফ জানান, বহু বছরের পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এই দুটি দোকানে ছিল প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মালামাল। আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় তিনি এখন পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছেন।

শামিম শরিফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এই দোকান দুটোই ছিল আমার পরিবারের একমাত্র ভরসা। আগুনে একটাও জিনিস বাঁচেনি। এখন আমি জানি না কীভাবে পরিবার চালাবো।”
অগ্নিকাণ্ডের পর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। পরিবার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন এবং কোথাও থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায় দিন কাটাচ্ছেন।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, দোকানের ভেতরে ইলেকট্রনিক্স শর্ট সার্কিট থেকেই এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মুহূর্তেই দোকানগুলোর ভেতরের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত মালিকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় শামিম শরিফ সম্পূর্ণভাবে পথে বসে গেলেও তিনি এখনো পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় তাকিয়ে আছেন সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতার দিকে।

 

সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সীমাহীন সম্পদ, জমি–বাড়ির বিস্তার, জাল দলিল, বেনামি লেনদেন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে যশোরের ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রার শাহীন আলমকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্নের ঝড় বইছে। তার জীবনযাত্রা, সম্পদের আকার ও আর্থিক প্রভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে স্থানীয় মহলে তাকে এখন “অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক” হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অস্বাভাবিক সম্পদের বিস্তার—অভিযোগের মূল কেন্দ্র

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুর ও ভাটারা এলাকাকে কেন্দ্র করে ডেভেলপার ও ভূমি ব্যবসায়ী চক্রের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে। এই অর্থ থেকেই গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জমি ও ভবন কেনা হয়।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের বড় বেরাইদে দুইটি বাড়ি, লালবাগ–কামরাঙ্গীরচরে ফ্ল্যাট, সাভার–রূপগঞ্জ–কেরানীগঞ্জে জমি—সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিসর এক সময়ের সাধারণ সরকারি কর্মচারীর জন্য অস্বাভাবিক বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে।

পরিবারকে সম্পদের আড়াল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—নিজের সম্পদ গোপন করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মা, ভাই, স্ত্রী এমনকি শ্বশুর–শাশুড়ির নামেও জমি কিনেছেন। কাশিয়ানীর বিভিন্ন মৌজায় শুধু শ্বশুর–শাশুড়ির নামেই ৪০ বিঘার বেশি জমির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব জমির অর্থায়নও শাহীন আলমের মাধ্যমেই হয়েছে বলে অভিযোগ।

সম্পদ বিবরণীর নির্দেশ জারি হতেই দ্রুত সম্পদ স্থানান্তর

অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশের পর হঠাৎ করেই নিজের ও স্ত্রীর নামে থাকা বহু জমি শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। যে পরিমাণ অস্থিরতা, তৎপরতা ও গোপন স্থানান্তর ঘটে, তা তার প্রকৃত সম্পদ নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন তোলে।

আয়-ব্যয়ের হিসাব দায়সারা—অভিযোগ আরও জোরালো

আয়কর নথিতে তিনি মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকার আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু তার নামে–বেনামে যে বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ, তা এই সামান্য আয় দিয়ে কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা, যা তার দৃশ্যমান সম্পদের সামান্য অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে।

জাল দলিল, ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ

ঝিকরগাছা এলাকার অধিগ্রহণকৃত জমি নিয়ে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে দলিল নথিভুক্ত করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নতুন নয়। পূর্বের সাব-রেজিস্ট্রার দলিলটি ফেরত দিলেও শাহীন আলম যোগদানের পর প্রতারণার মাধ্যমে এটি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
কর্মজীবনের বিভিন্ন জায়গায় ভূয়া দলিল সৃজন, ঘুষ গ্রহণ এবং বেনামী রেজিস্ট্রি অনুমোদনের মতো কর্মকাণ্ডে তিনি বহুবার সমালোচিত হয়েছেন।

বিলাসী অভ্যাস ও নগদ অর্থ পরিবহনের অভিযোগ

প্রতি সপ্তাহে বিমানে যশোর–ঢাকা যাতায়াত, বিলাসী খরচ এবং ঢাকায় ফেরার সময় ব্যাগভর্তি নগদ অর্থ বহনের অভিযোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। একজন সরকারি কর্মচারীর এ ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাড়ি, ভবন, ফ্ল্যাট—সব মিলিয়ে সম্পদের অস্বাভাবিক পাহাড়

ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার নামে দুটি ১০ তলা ভবন, মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বিভিন্ন জেলায় প্লট ও দোকান—সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ সাধারণ সরকারি বেতনের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সম্পদ বিবরণী বর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্বের অভিযোগ

সম্পদ বিবরণীর নির্দেশ জারি হলে সাব-রেজিস্ট্রারদের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসময় সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি–ধামকিও দেওয়া হয়, যা আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি

অভিযোগগুলোর বিষয়ে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এস এম মিরাজ //
বরিশাল অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহাকে কেন্দ্র করে যে দুর্নীতির কুখ্যাত অধ্যায় ঘনীভূত হয়েছে, তা যেন রাষ্ট্রীয় অনিয়মের এক স্থাপত্যশৈলী। স্থানীয়দের অভিযোগ—উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে তিনি নাকি ‘কর্তৃত্ববাদী ঘুষযন্ত্রে’ পরিণত হয়েছেন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বরাদ্দ—কোথাও নাকি তার “অফিস খরচ” নামের অব্যর্থ চাঁদাবাজি থেকে রেহাই নেই। যদিও প্রকল্প কর্মকর্তা সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন, তবুও মাঠপর্যায়ের নালিশগুলো দিনদিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

দুর্নীতির টাকায় ‘গ্রামীণ ডুপ্লেক্স সাম্রাজ্য’

ফরিদপুরের হরিসভা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অয়ন সাহার অভিজাত তিনতলা ডুপ্লেক্স ভবন—যার স্থাপত্য দেখে স্থানীয়রা হতবাক। তাদের ভাষ্যমতে, তার পিতা অরূপ কুমার সাহা ছিলেন সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। কিন্তু অয়ন সাহার চাকরিতে যোগদানের পর পরিবারের আর্থিক অবস্থায় যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তা স্বাভাবিক আয়-উৎসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন অনেকেই। স্থানীয়দের মতে, সরকারি চাকরির বেতন দিয়ে এ ধরনের সম্পত্তি গড়ে তোলা সম্ভব নয়—যা অনিয়মের গন্ধকেই আরও ঘনীভূত করে।

পূর্বের কর্মস্থল বানারীপাড়ায়ও ‘কোটির প্রকল্প লুণ্ঠন’
অভিযোগের তালিকা এত দীর্ঘ যে তা প্রায় দুর্নীতির এক ‘জ্যামিতিক ক্রমবৃদ্ধি’। বরিশালের বানারীপাড়ায় চাকরিকালীন সময়েও তিনি নাকি কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম করেছেন। বানারীপাড়ার উত্তরকুল গ্রামের মোজাম্মেল হক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগের অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস এবং তার বর্তমান কর্মস্থল আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনে।
ঘুষের ‘৮%–১০% বাধ্যতামূলক কর’
আগৈলঝাড়ার একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন—প্রতি প্রকল্পে ৮% থেকে ১০% পর্যন্ত অঘোষিত টোল দিতে হয়। স্থানীয়দের মতে, “অফিস খরচ” নামের এই অবৈধ চাঁদা না দিলে প্রকল্পের বিল পরিশোধ হয় না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—মসজিদ, মন্দির, মাদরাসার বরাদ্দ পর্যন্ত নাকি তার এই ‘গোপন রাজস্বনীতির’ বাইরে নয়।

অনিয়মে রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বহুমুখী অভিঘাত,
এ ধরনের অনিয়ম ও প্রকল্প লুটে দেশের উন্নয়নচক্র ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে—
জনগণের বিশ্বাসহানি: সরকারি উন্নয়ন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ভেঙে পড়ে।
অবকাঠামোর মানহানি: ঘুষের কারণে প্রকল্পে মানসম্পন্ন কাজ হয় না, ফলস্বরূপ এলাকায় টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
রাজস্ব অপচয়: সরকারি টাকার অপব্যবহারে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ: একাধিক স্তরে অনিয়ম ছড়িয়ে পড়ে—যা ভবিষ্যত প্রশাসনকেও নৈতিক সংকটে ফেলে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষতি: যারা প্রকল্পের প্রকৃত সুবিধাভোগী, তারা ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
অভিযুক্তের দাবি—সর্বস্ব অস্বীকার,

পিআইও অয়ন সাহাকে অভিযোগ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
“আমি কোনো অনিয়ম করিনি। প্রমাণ থাকলে দেখানো হোক।”
তার এই বক্তব্য স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও উসকে দিয়েছে।
দুদকের বরিশাল বিভাগীয় উপ-সহকারী পরিচালক সুশান্ত রায় বলেন,
“প্রমাণ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিক জানান,
“দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
এই অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তই এখন সময়ের দাবি। কারণ উন্নয়ন প্রকল্পের ঘুষ-দুর্নীতি শুধু ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির অস্ত্র নয়—এটি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নযাত্রার ওপর এক গভীর আঘাত। জনগণের করের টাকায় গড়া প্রকল্প যদি ঘুষের গহ্বরে তলিয়ে যায়, তাহলে উন্নয়নের স্বপ্নও ক্রমে ধুলোয় মিশে যাবে।

 

এস এম মিরাজ//
বরিশালের আমানতগঞ্জ ভূমি অফিস—যে অফিসের দরজায় সাধারণ মানুষ ন্যায়ের আশায় সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে, সেই দরজার ভেতরেই নাকি চলছে ঘুষের কদর্য কারবার। অভিযোগের তীর সোজা গিয়ে ঠেকেছে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ খান–এর বুকে। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে চাপা থাকা ক্ষোভ এবার মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষের।

কথা বলছিলেন ভুক্তভোগী মোঃ আবু সালে আহমেদ। তার কণ্ঠে ক্ষোভ, তবু এক ধরনের ভাঙা অসহায়ত্ব—
১৩ নভেম্বর তিনি কাউনিয়া মৌজার জেল নং ৪৭-এর ৩০৬৮ খতিয়ানের দুইটি নামজারি করাতে অফিসে গেলে, কর্মকর্তা মাসুদ নাকি চেয়ে বসেন ৭,০০০ টাকা ঘুষ। আইন অনুযায়ী যেখানে সরকারি ফি মাত্র ১,১৭০ টাকা, সেখানে অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা দাবি—এ যেন প্রশাসনের গায়ে বসে থাকা কালো ছায়া। অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি ৪,০০০ টাকা দিয়ে নামজারি করান।

এ অভিযোগ নতুন নয়। তার আগে জেল ৪৮, আমানতগঞ্জ মৌজার ভিপি সম্পত্তিতে নাকি তিনজনের নামে ভুয়া খতিয়ান খুলে খাজনা কেটে দেওয়ার মতো ভয়ংকর দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের তালিকা যেন দিনে দিনে ফুলে–ফেঁপে পাহাড় হচ্ছে।

অবশ্য মাসুদ খান সব অভিযোগ অস্বীকার করে এক কথায় বলেন—
“এসব সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন।”
সরকারি কর্মকর্তা যখন এমন সোজা কথায় দায় ঝেড়ে ফেলেন, তখন জনগণের জন্য আর কীই বা অবশিষ্ট থাকে?

স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন,
“ভূমি অফিসে গেলে হয়রানি ছাড়া কিছুই নেই। টাকা না দিলে কোনো কাজই হয় না। আইন আছে বই কি—তার ব্যবহার কই?”

অমানতগঞ্জের মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে—
যে অফিসে তারা সেবা নিতে যায়, সেই অফিস যদি হয় টাকা–চালিত, তবে ন্যায়বিচার কোন দরজায় পাওয়া যাবে?

ঘুষের ঘূর্ণি আর দুর্নীতির দমবন্ধ অন্ধকারের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষ একটাই দাবি তুলেছে—
দ্রুত তদন্ত, কঠোর ব্যবস্থা এবং ভূমি অফিসে স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা।

দুর্নীতি যদি শেকড় গেঁড়ে বসে, তবে ন্যায় কোথায় দাঁড়াবে?
অমানতগঞ্জের মানুষ আজ সেই প্রশ্নের উত্তর অপেক্ষায় বসে আছে।

 

এস এম মিরাজ//
চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বহুদিন ধরে জিম্মি ছিল ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি চুন্নু এবং তার ভাই পান্নার দৌরাত্ম্যে। সরকারি সম্পদ লুট, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস—তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর তারা প্রকাশ্যে সরকারি বৈদ্যুতিক তার চুরি করলেও ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।

সেই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের আস্তানা ফাঁস হলো অবশেষে। চুন্নু ও পান্নার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সরকারি বৈদ্যুতিক তার। আরও জানা গেছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভোলা-বরিশাল বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের বহু কোটি টাকার তার চুরি করে পাচার করে আসছিল। যে প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ ছিল কয়েকশো কোটি টাকা—সেই লাইনের তার কেটে একের পর এক বিক্রি করেছে তারা।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে সরকারি বৈদ্যুতিক তার কেটে নেওয়া, পাহারাদারদের ভয়ভীতি দেখানো, এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখা—সবই করত প্রকাশ্যে। তাদের বিরুদ্ধে আগে বহু অভিযোগ উঠলেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে তারা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযানের খবর পেয়ে চুন্নু–পান্না গং রাতারাতি পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর ভাষ্য—“ওরা এখানে ছোট সরকার ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই বিপদ।”

প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনাকে ‘বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পলাতক দুই ভাইকে গ্রেপ্তারের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে এবং এ চক্রে জড়িত আরও যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এলাকাজুড়ে এখন একটাই দাবি—
এই তারচোর সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।

 

বরিশালে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দুই যুবক ভাটার খাল এলাকার হাকিম আলীর ছেলে
মোঃ মামুন রেদোয়ান,পলাশপুর এলাকার সালাম মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা
কে স্থানীয় জনতা আজ মঙ্গলবার ( ৯ ডিসেম্বর) আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নেতৃত্বে ১৫–২০ জনের একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় করে আসছিল। সম্প্রতি এদের কাছে ব্লাকমেইলের শিকার হন হাসপাতাল রোডের খন্দকার ফার্নিচারের
স্বত্বাধিকারী মোঃ লিয়াকত আলী খন্দকার। তিনি জানান, চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং দাবি করেন যে কাশিপুর এলাকায় এক নারীর সঙ্গে তার ‘গোপন ভিডিও’ রয়েছে। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। লিয়াকত আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন রেদোয়ানকে দোকানে এসে প্রমাণ দেখাতে বলেন। ৭ ডিসেম্বর সে দোকানে এলেও কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে ব্যর্থ হয়। এরপরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরদিন আবার ফোনে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও প্রকৃত সাংবাদিকদের জানানো হলে তারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় দোকানে অবস্থান নেন। নির্ধারিত সময়ে মামুন রেদোয়ান ও জাহাঙ্গীর মোল্লা এলে স্থানীয় জনতা দুজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।।এ সময় উপস্থিত হাওয়া বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান তাকে ও তার মেয়েকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে দুই লক্ষ টাকার সোনার গয়না নিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে তারা। আরও অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েছে—আমরা বিচার চাই।” মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, “আমি বয়স্ক মানুষ, দোকান চালিয়ে সংসার চালাই । আমার সঙ্গে যে প্রতারণা হয়েছে তার কঠোর বিচার চাই। তাই আমি ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। আশাকরি, সঠিক বিচার পাবো। ” ৩৫টি পেশাদার সাংবাদিক সংগঠনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী বলেন, “সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম চলতে দেওয়া হবে না। সবার সহযোগিতায় এই চক্রকে নির্মূল করা হবে।” বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আল মামুন–উল–ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম—এই নামটি এখন দুর্নীতি, তদবির, কমিশন বাণিজ্য আর সন্ত্রাসী-রাজনীতির এক ভয়ংকর মিশ্রণ। এক কথায়—দপ্তরের ভেতরে এক রাষ্ট্রীয় লেবাস পরা দুর্নীতির দানব। তার অপকর্মের তালিকা এত বিশাল যে পুরো অফিসই আজ তার ‘কালো শাসন’-এর সামনে পঙ্গু।তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির পাহাড় তো বহু আগেই জমে ছিল; এবার সেই পাহাড়ে যোগ হলো সন্ত্রাসী দিয়ে ঠিকাদারকে হত্যার হুমকি। এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়—এটি রাষ্ট্রবিরোধী দুঃসাহস, প্রশাসনিক ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহার।
হুমকির বিস্তারিত—যা পড়লেই বোঝা যায় শহিদুল কতটা ভয়ংকর
গত ৩০ নভেম্বর, ঠিকাদার ফারুক হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং–২০৭৬) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়—
নগরীর বখাটে ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুন,
ঝালকাঠির রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বড় হওয়া জুয়েল,
দু’জনই নিজেদের শহিদুলের “ছায়া-গুন্ডা” পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারকে ফোন করে অকথ্য গালাগাল, রক্ত ঝরানোর হুমকি, এবং মেরে ফেলার আল্টিমেটাম দেয়।
এই ভয়ংকর ফোনকলগুলো শহিদুলের অভয়ারণ্য কতটা হানাদারি হয়ে গেছে—তার প্রমাণ।

ফারুক জানান—টেন্ডারের মাধ্যমে বৈধভাবে পাওয়া কাজ শহিদুল অনৈতিকভাবে বিক্রি করে দেন। ফারুক মামলার কথা বলতেই শহিদুলের দুশ্চরিত্র সিন্ডিকেট তাকে ‘গায়েব করার’ ঘোষণা দেয়।
এ যেন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা নয়—এক সন্ত্রাসী গডফাদারের মতো আচরণ।

কোতোয়ালি থানার ওসি জানান—তদন্ত চলছে; আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর শহিদুল?
তার চিরাচরিত নাটক—
“কিছু জানি না, ঢাকায় আছি, পরে জানাবো।”
এমন অভিনয় দুর্নীতিবাজদের মুখস্থ সংলাপের মতো।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশলে শহিদুলের দানবীয় দুর্নীতি—যা ফাইল খুললেই দুর্গন্ধ বের হয়

শহিদুল দপ্তরে যোগদানের পরই তৈরি করেন অপরাধের ‘সোনালি যুগ’—
যেখানে প্রতিটি প্রকল্প, প্রতিটি ফাইল, প্রতিটি বিল তার কমিশনের চাবিতে তালাবদ্ধ।

✔ ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প নিজের নামে তুলে নিয়ে ৭% কমিশনে বিক্রি

✔ ফাইল নাড়াতে চাই কমিশন, বিল ছাড়তে চাই কমিশন, চেক দিতে চাই কমিশন

✔ ৩৫ লক্ষ টাকা কমিশন হিসেবে তুলে নেওয়ার পর অপারেটর রাশেদের পলায়ন

✔ ঢাকার সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে সাপ্তাহিক ইলিশের ঘুষ—অসাধু আঁতাতের চরম উদাহরণ

✔ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিককে দিয়ে দুর্নীতির ‘যুগ্ম শাসন’—দপ্তরকে রূপ দেন মাফিয়া কার্যালয়ে

সব মিলিয়ে শহিদুল আজ বরিশাল ইপিআই দপ্তরে এককেন্দ্রিক দুর্নীতি-রাষ্ট্র গড়ে তুলেছেন।

দপ্তরের ভেতরে ভয়াবহ রামরাজত্ব

সূত্র জানায়—

শহিদুল-আশিক জুটি মিলে পুরো দপ্তরকে ‘কমিশন ট্যাক্স অফিস’ বানিয়ে ফেলেছে।

৬–৮ জন ঠিকাদার সিন্ডিকেট তার পা চাটিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটছে।

সাধারণ ঠিকাদাররা দপ্তরে ঢুকলেই অপমান, ভয়, হুমকি, অপদস্থতা—এটাই তাদের নিয়তি।

এ যেন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়—দুর্নীতির কসাইখানা।
দুদক তদন্তে নামলে কী বের হবে?

একটির পর একটি ভয়ংকর অধ্যায়।প্রকল্প বিক্রির লুকায়িত ডিল।ফাইল আটকে কমিশন আদায়ের রসিদ।রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।সন্ত্রাসীদের বেতন তালিকা।দুর্নীতির টাকার অবৈধ প্রবাহ।

দুদক তদন্তে নামলে শহিদুলের দুর্নীতি-সাম্রাজ্য ভেঙে পড়বে ভূমিকম্পের মতো।

শহিদুল আজ বরিশালের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রশাসনিক অপরাধী

যে ব্যক্তি—

সন্ত্রাসী দিয়ে ঠিকাদারকে মৃত্যুহুমকি দেয়,

কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিজের নামে নিয়ে বেচাকেনা করে,

দপ্তরকে দুর্নীতির দুর্গ বানিয়ে ফেলে,

অভিযোগে পর পর অভিযুক্ত হয়েও বেপরোয়া থাকে—

সে কেবল দুর্নীতিবাজ নয়, প্রশাসনের অন্তরে লুকিয়ে থাকা এক মহাদুর্বৃত্ত।
এমন কর্মকর্তার হাতে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প নয়—
রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পর্যন্ত জিম্মি হয়ে পড়ে।