পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ দিন আগে অসুস্থ মা মাহিনুরকে (৫০) রেখে চলে যান ছোট ছেলে ইব্রাহিম। এরপর থেকে মায়ের আর কোনো খোঁজখবর নেননি তিনি। জানতে পেরে মিন্টু নামের স্থানীয় এক যুবক অসুস্থ ওই নারীর দেখভাল করেন। অবশেষে শুক্রবার (৯ জুলাই) ইব্রাহিমের সন্ধান পাওয়া যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫ জুলাই সকালে মাহিনুরকে কলাপাড়া হাসপাতালে রেখে কাউকে কিছু না বলে সটকে পড়ে ছেলে ইব্রাহিম (১৬)। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও রোগীর পাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে হাসপাতালের আয়ারা মিন্টুকে নামের এক যুবকের কাছে জানান। পরে ওই যুবক অসুস্থ নারীর দেখাশোনা করেন।
এ বিষয়ে মিন্টু বলেন, ‘আমি হাসপাতালে একটি কাজে এসেছিলাম। আমাকে তার ব্যাপারে বলা হয়। তার কাছে গিয়ে দেখি তিনি উঠতে পারে না, কান্নাকাটি করেন। আমি তাকে কোলে করে তার সব কাজ করে দিয়েছি এই পাঁচদিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার থেকেই তার পরিবারের খোঁজ করি। তারপর শুক্রবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাবের সভাপতি কেএম বাচ্চু ভাই আমাকে তার ছেলের সন্ধান দেন।’
খোঁজ নিয়ে গেছে, মাহিনুর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটার আলীপুর বাজার সংলগ্ন মৃত আ. অলিউল্লাহর স্ত্রী। গত ১৫ বছর আগে তিন ছেলে-মেয়ে রেখে মাহিনুরের স্বামী মারা যান। বড় ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে চট্রগ্রামে ও মেয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকে তারা কেউ মায়ের খোঁজ রাখে না। বেশকিছু দিন মাহিনুর কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত। তার ছোট ছেলে ইব্রাহিম একটি ট্রলি গাড়ির হেলপারির কাজ করে সংসার চালান।
ইব্রাহিম বলেন, ‘লকডাউন থাকায় কাজ বন্ধ। আমি নিজেই চলতে পারি না, কি করব। মাকে হাসপাতালে রেখে আসছি। আর আমি খোঁজ নিতে যাইনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য ভাইকে বলেছিলাম। তিনিও লকডাউনে কর্মহীন। তারও কষ্ট করে সংসার চলছে।
লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমি আজ সন্ধ্যায় ওই পরিবারের কথা শুনতে পাই, পরে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দুই হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তী খোঁজ খবর রেখে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করব।’
এস এম মিরাজ ||পুলিশ ও কোস্টগার্ড পাহারায় চলছে শত শত লোকের বেলতলা খেয়া পারাপার।গত ৪ জুলাই লকডাউন এর ভিতরে অতিরিক্ত লোক নিয়ে পারাপারের সময় ট্রলারডুবির ঘটনায় থেমে নেই তাদের পারাপারের ব্যবস্থা।
চলমান লকডাউনে নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরিশাল বেলতল খেয়াঘাটের নৌকায় গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। লকডাউনের অজুহাতে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
জেলা প্রশাসন থেকে করোনাকালে প্রত্যেক খেয়ায় ১০ জন যাত্রী বহনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না মাঝি-মাল্লারা। ঘাটে টানানো নেই জেলা পরিষদের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। তাই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বরিশাল নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
এ খেয়াঘাটে বরিশাল জেলা পরিষদ কর্তৃক ভাড়ার তালিকা টাঙানোর কয়েক দিনের মধ্যেই তা উধাও হয়ে যায়। সেই সুযোগে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন মাঝি-মাল্লারা।
নগরীর বেলতলা খেয়াঘাটে দেখা গেছে প্রতি মোটরসাইকেল চালকসহ ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ৫০ ও জনপ্রতি ৩০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করতে। হেনস্তার ভয়ে সাধারণ যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিলেও রাতের অন্ধকারে তা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেওয়া হয়।
একই দৃশ্য নগরীর কাউরচর খেয়াঘাট ও চাঁদমারী খেয়াঘাটে। লকডাউনে জেলা প্রশাসন থেকে চরকাউয়া খেয়াঘাটে স্বাস্থ্যবিধি পাঁচ টাকা হারে ১০ জন যাত্রী পারাপারের জন্য বলা হলেও তা মানছেন না মাঝিরা। প্রত্যেক নৌকায় গাদাগাদি করে যাত্রী উঠিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা।
এতে প্রায়ই যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় মাঝিমাল্লাদের। লকডাউনের পূর্বে চরকাউয়া খেয়াঘাটে নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৩ টাকা। করোনাকালে তা বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বেলতলা ঘাটে নূরজাহান নামে একজন মধ্যবয়স্ক নারী নিহত স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ঘাটে আসলে মাঝি ২শ টাকা দাবি করেন। অবশেষে ওই দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেই নদী পার হতে হয়েছে।
তিনি জানান, প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার কত তা জানতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফলে বাধ্য হয়েই বেশি টাকায় নদী পার হতে হয়েছে।
বেলতলার বাসিন্দা সবজি ব্যবসায়ী জুলাস জানান, প্রতিদিন তিনি দুইবার কীর্তনখোলা নদী পার হতে হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে প্রতিদিনই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনিয়ম বন্ধে নিয়মিত খেয়াঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দাবি করেছেন তিনি।
পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক মানুওয়ারুল ইসলাম অলি জানান, খেয়াঘাটের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়াটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলাপ করে করোনাকালে পাঁচ টাকা করে ১০ জন যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু তা অমান্য করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন মাঝিরা।
শতশত লোক নিয়ে ট্রলারভর্তি করে নদী পারাপারের ঘটনায় বেলতলার ইজারাদার মোখলেসের কাছে জানতে চাইলে সে জানান,থানার ওসি আমাকে বলেছে পারাপার করতে (কথার অডিও রেকর্ড রয়েছে)।এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসি জানান আমি বেলতলা খেয়াঘাটের পারাপারের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়নি। শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তি ও রোগী পারাপার করতে পারবে সেটা আমি বলেছি।আপনাদের মিসগাইড করার জন্য ইজারাদার একথা বলেছে।
স্থানীয় সিরাজ নামের আরেক বাসিন্দা জানান,বরিশাল সিটি কলেজের প্রফেসর কাওছার এই খেয়ার ইজারা নেন। তার নেতৃত্বেই চলছে এই খেয়া পারাপারে জুলুম অত্যাচার।সে নির্ধারণ করেছে অতিরিক্ত ভাড়া।অদৃশ্য ক্ষমতার বলে প্রশাসনকে জিম্মি করে সে ৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।সে আরও জানান, কাওসার নির্দেশ দিয়েছে যদি কেউ ভাড়া কম দিবে বলে তাহলে তাকে খেয়া পারাপার না করার জন্য।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে দেলোয়ার ও মোকলেস অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।আলোকিত বরিশালের প্রতিবেদক তথ্য নিয়ে অফিসে আসলে কাউসার ফোন দিয়ে তাকে সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং প্রতিবেদকের সাথে দেখা করে টাকা দেবার চেষ্টা করেন (সমস্ত কথা রেকর্ড রয়েছে)। ইজারাদার কাওসারের জুলুম অত্যাচার থেকে মুক্তি চাচ্ছে বেলতলা খেয়া পারাপারের যাত্রীসাধারণ। এব্যাপারে কোস্টগার্ডের সিসি কে ফোন দিলে সে জানান, এর আগেও ট্রলার ধরেছি,অতি শীঘ্রই তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও টাকা খুচরা না থাকার বাহানায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। তাই ভোগান্তি লাঘবে প্রশাসনের উচিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা।


