পুলিশের হেফাজতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ছে।নিহত যুবকের নাম লিটন খাঁ (৩৫)। তার বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা থানার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। পেশায় তিনি সিএনজি চালক। জীবিকার তাগিদে লিটন খাঁ ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। তার তিন সন্তান রয়েছে।
দশমিনা থানা পুলিশ রোববার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নিয়ে যায়। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাতে তাকে পুলিশ পাহারায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান।
লিটনের স্ত্রী মাজেদা বেগম জানান, বাড়ির পাশের আক্রাম খান সিনিয়র দাখিল মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত শনিবার রাতে মাদরাসা-সংলগ্ন বিরোধীয় জমির একটি পুকুরে কে বা কারা বিষ দেয়। এতে ওই পুকুরের মাছ মরে ভেসে ওঠে। পুকুরে বিষ দেয়ার ঘটনায় মাদরাসা সুপার মাওলানা সিহাব উদ্দিন তার স্বামী লিটনকে সন্দেহ করেন। তবে ওই সময় লিটন ঢাকায় ছিলেন। এরপর মাদরাসা সুপার লিটনের নামে দশমিনা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জমি নিয়ে বিবদমান সমস্যা সমাধানের কথা বলে ফোনে লিটনকে বাড়িতে আসতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘রোববার আমার স্বামী বাড়িতে আসেন। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় আমার স্বামী ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন। রাতে থানা পুলিশ জানায়, আমার স্বামী অনেক অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ (সোমবার) সকালে জানতে পারি, আমার স্বামী মারা গেছেন।’
থানায় নেয়ার সময় লিটন সুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেন তার স্ত্রী মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘তার শরীরে কোনো রোগ ছিল না। হঠাৎ করে কীভাবে মৃত্যু হলো তা পুলিশই ভালো বলতে পারবে। আমার তিন সন্তান এখন এতিম। আল্লাহ এর বিচার করবেন।’
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম জানান, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়ে লিটন খাঁ নামে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। থানায় আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে বাথরুমে যান লিটন। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তার হাতে একটি বোতল ছিল। তাৎক্ষণিক তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসা জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ১টার দিকে লিটন মারা যান।
তিনি আরও জানান, পুলিশ হেফাজতে তাকে মারধর দূরের কথা; তার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহারও করেননি।
দশমিনা ও গলাচিপা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, থানায় প্রবেশের সময় কীটনাশকজাতীয় তরলের বোতল লুকিয়ে রেখেছিলেন লিটন খাঁ নামের ওই যুবক। থানায় প্রবেশের চার মিনিটের মাথায় তিনি বাথরুমে যান। এরপর ওই তরল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন লিটন। এরপরও থানার সেন্ট্রি বা কারোর দায়িত্বে গাফিলতি ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।