#

বর্ষা শুরুর আগেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা । মশকনিধনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তেমন কার্যক্রম না থাকায় মশা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

#

অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা শুরুর আগেই মশা নিধনে আগাম ব্যবস্থা না নিলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল সিটিতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বাস। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন মাত্র ৭০ কর্মচারী। আধুনিক সরঞ্জাম বলতে রয়েছে দুটি ফগার মেশিন।

আর রয়েছে ৭০টির মত হস্তচালিত স্প্রে। যারা এসব পরিচালনা করছেন, তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। ফলে তারা জানেন না কোথায় কোন প্রজাতির মশা রয়েছে। কোন মশার জন্য কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু।

নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব অনেক বেশি বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা।

এখানকার রূপতলী হাউজিং এলাকার ২৫ নম্বর রোডের ১ লেনের বাসিন্দা হেমায়েত ইসলাম বলেন, ছয়তলায় একটি ফ্লাটে স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকি। মশার উৎপাত এতই বেশি যে সন্ধ্যার পর ছেলে মেয়েকে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। মশার জ্বালায় বাসায় কোথাও একটানা বসে থাকা যায় না।

মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু মশা মারতে করপোরেশনের লোকজনের দেখা মিলে না।

তিনি বলেন, নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় এটি নিম্নাঞ্চল। সারা বছরই এ ওয়ার্ডে পানি জমে থাকে। এর মধ্যে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে।

এছাড়া রূপতলী হাউজিং এলাকার পাশেই বাস টার্মিনাল। যার কারণে টায়ার ও পরিত্যক্ত টিউব যন্ত্রপাতি পরিত্যাক্ত অবস্থায় প্রায় পড়ে থাকে।

টার্মিনালের রাস্তার দুই পাশের ড্রেন ও নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, কর্কশিটের বাক্স, ডাবের খোসা, ঠোঙা জমে আছে। এখানে প্রচুর মশা জন্মায়। কিন্তু এ এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না।

নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের নতুন বাজার কালী মন্দির গলির বাসিন্দা স্বপন দাস জানান, নতুনবাজার হলো মশার কারখানা। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে মশা যেভাবে ঘিরে ধরে মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

দিনেও মশা কামড়ায়। ২৪ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। দুই দিন ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। মশা মরার কথা। অথচ মশার উপদ্রব একটুও কমেনি।

নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অক্সফোর্ড মিশন রোডের বাসিন্দা ও সবুজ আন্দোলন ফাউন্ডেশনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ জানান, বিকেল হলেই মশার উৎপাত শুরু হয়।

সন্ধ্যা নাগাদ তা চরমে পৌঁছে। সন্ধ্যার পর কয়েল বা স্প্রে ছাড়া ঘরে থাকা যায় না। এরপরও মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।

 

তিনি আরও বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। আবার গরমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে।

তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। সাধারণত জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এ সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হয়। তবে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা মশা মারতে কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম চাললেও মশা কমছে না।

মশা নির্মূলে আগাম ব্যবস্থা না নিলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি নিয়মিত ট্যাক্স দেই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আমার অধিকার। সেই জায়গা থেকে মশার থেকে রেহাই পেতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, মশার উপদ্রব বেশি। তাই জ্বর, মাথা ও চোখব্যথা, গায়ে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ এসব উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী সরকারি হাসপাতালে আসলে ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমানর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, মশক নিধন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। নগরীর খাল ও ড্রেন, জলাশয়, ডোবা, নালা, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। খাল পুনঃখননের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মশার উপদ্রব আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কাজের গতি বাড়াতে আরও ১০ ফগার মেশিন কেনা হচ্ছে। আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যে মেশিনগুলো চলে আসবে।

এছাড়া মশার কবল থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে ১৭ মার্চ থেকে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে। বিশেষ অভিযানে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি আসবে। আশা করছি মাসখানেকের মধ্যে মশার উৎপাত কমে যাবে।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here