 
	                            						বরিশাল নগরীর থানা কাউন্সিল এলাকা থেকে গত শুক্রবার ইফতারের কিছুক্ষণ আগে কল আসে মোবাইল ফোনে। ওপাশের কণ্ঠটি অসহায় ও ভয়ার্ত। তার বাড়িতে অসুস্থ রোগী, তার অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার, হবে? এপাশ থেকে তাকে অভয় দেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী, ‘কোন চিন্তা করবেন না, আমরা আসছি।’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত টিম এই চিকিৎসকের নেতৃত্বে অক্সিজেন নিয়ে হাজির হন ওই বাসায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান পরিবারের দুই সদস্য করোনায় আক্রান্ত। এ সময় তাদের অক্সিজেন দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপত্র দেন ডা. মনীষা। বাসার অপর সদস্যকে পৃথকভাবে থাকার পরামর্শ দেন। এটা একটি রাজনৈতিক দলের করোনাকালীন কর্মকাণ্ড। দলটির নাম বাসদ। সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা এভাবেই করোনাকালে সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সচল রেখেছেন তাদের অক্সিজেন ব্যাংক।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ওই বাড়িতে পৌঁছার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ডা. মনীষা চক্রবর্তী‘ আইডি থেকে লাইভ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ২৪ হাজার রি-অ্যাক্ট, ২৮ হাজার ভিউ এবং ২৮১ জন বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন। মন্তব্যগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, জেলাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বাসদের এ কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং বিত্তবানদের এভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ডা. মনীষার এই উদ্যোগে সহায়তা করার জন্যও আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকে।
জানতে চাইলে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বেশিরভাগ মানুষ করোনা হওয়ার পরও হাসপাতালে যেতে চান না। তাদের জন্য অক্সিজেন থেকে শুরু করে সকল ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। এমনকি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ওষুধও আমরা দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল আছে। আমরা প্রশাসনের কাছে নগরীর বগুড়া রোডের আম্বিয়া হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার জন্য চেয়েছিলাম। বর্তমানে বরিশালের ৭০ ভাগ টেকনোলজিস্টের চাকরি নেই। এরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত। আমরা তাদেরকে নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু, রাজনীতির এমন মেরুকরণ, ভালো উদ্যোগের জন্য চাইলেও তা আমাদের দেওয়া হয়নি।
ডা. মনীষা বলেন, অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন, অনেকেই অক্সিজেনের অভাবে ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। আমরা আর কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতে চাই না। এ কারণেই অক্সিজেন ব্যাংক চালু করেছি। ধনাঢ্যদের কাছে আবেদন আপনারও এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসুন, তাহলে অনেক জীবন বেঁচে যাবে।
বাসদ এর সাংগঠনিক সূত্র জানিয়েছে, গত বছর মার্চ মাস থেকে করোনার প্রকোপ শুরু হয় সারাদেশে। এর ব্যতিক্রম হয়নি বরিশালে। নগরীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড থেকে শুরু করে আইসিইউ এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও সংকট দেখা দেয়। এ সংকট মোকাবিলায় সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসে বাসদ। তারা গত বছর জুন মাসে নগরীর ফকিরবাড়ি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফ্রি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও ঘরে থেকে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারাই বেশি অক্সিজেনের সংকটে পড়েন। তাদের অনেকে বাসদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্রি অক্সিজেন সেবা গ্রহণ করে আসছেন। ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেওয়ার জন্য বাসদ এর ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
এমন একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, ‘নগরীর যে স্থান থেকেই আমাদের অবহিত করা হউক আমরা সাথে সাথে সেখানে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা একরকম চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করি। অক্সিজেনের লেবেল থেকে শুরু করে করোনা রোগের সকল আলামত জেনে সেভাবেই চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এখানে চিকিৎসকেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। যতদিন পর্যন্ত রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন ততদিন তাকে সেভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।’
আরেক স্বেচ্ছাসেবী জানান, যাদের বেশিদিন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় সেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত অক্সিজেন কনসেনট্রেটরও ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আমাদের কাছে ৪টি কনসেনট্রেটর আছে। এসব কনসেনট্রেটর বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে।
বাসদ’র জেলা কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন বলেন, ‘যেসব রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য প্রথমে অক্সিজেন ব্যাংক থেকে পালস অক্সিমিটার মেশিন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে পালস অক্সিমিটারের রিডিং দেখে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেই। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৩০টি পালস অক্সিমিটার নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ২৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ১০০ পালস অক্সিমিটার দিয়ে এই কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এত বেশি কল আসছে যে তা সামাল দিলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ জন্য আরও অক্সিজেনের সিলিন্ডার প্রয়োজন। তিনি বিত্তবানদের এজন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত: গত বৃহস্পতিবার থেকে বরিশাল মেট্রো পলিটন পুলিশ (বিএমপি)ও একইরকম সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অক্সিজেন ব্যাংক সিলিন্ডারের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু করেছে। এমন কাজে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএমপি কমিশনারও।
 
        

 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        

 
                            
 
                                    