উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালামের বিরুদ্ধে।
তিনি শনিবার দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে তার শিশুপুত্রকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক থানায় ফোন দেয়ার চেষ্টা করলে তার ফোন ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ নেতা কালাম। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে।
এ ঘটনায় ডা. মনিরুজ্জামান খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতা দাবি করেছেন, চিকিৎসক তার মুমূর্ষু শিশুকে চিকিৎসাসেবা দিতে মানবিকতা দেখাননি।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরুজ্জামান খান রোববার বলেন, বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ওপর করোনা আতঙ্কও রয়েছে।
শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এসব বিষয় মনিটরিং করছিলেন তিনি। হঠাৎ ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম ইমার্জেন্সি রুমে তার ৩ বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় স্টাফরা কালামকে মাস্ক পরে আসতে বলেন।
পরে ছাত্রলীগ নেতা কালাম জানান, তার বাচ্চার তিনবার পাতলা পায়খানা হয়েছে। তিনি বাচ্চার হাতে ক্যানুলা পরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।
ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, তারা ওই বাচ্চাকে দেখে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখেননি। যে কারণে ভর্তি ছাড়া ক্যানুলা পরাতে চাননি।
এতে ছাত্রলীগ নেতা কালাম উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি থানায় ফোন দেয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ নেতা তার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে হুমকি ধামকি দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে কালাম সটকে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইশরাত জেরিন জুঁই বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এটা নিয়ে তারা এখনো বসতে পারেননি। সোমবার বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।
তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, তার গোটা পরিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
তিনি শনিবার তার অসুস্থ শিশুপুত্রকে হাসপাতালে নিয়ে ডা. মনিরুজ্জামানকে বাচ্চাকে বাঁচাতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু তিনি মাস্ক পরার জন্য তাড়া দেন। পরে মাস্ক পরে এসে বাচ্চাকে দেখতে চিকিৎসককে অনুরোধ জানান।
কিন্তু ডা. মনিরুজ্জামান সীমিত বেডের অজুহাতে এখানে ভর্তি করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
একপর্যায়ে তিনি ক্যানুলা পরিয়ে দেয়ার কথা বললেও ডা. মনিরুজ্জামান বাচ্চাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এ নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা কালাম বলেন, তার মুমূর্ষু শিশুকে সেবা দিতে মানবিকতা দেখাননি চিকিৎসক।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নকিব আকরাম বলেন, তিনি থানায় ছিলেন না। তাই বিষয়টি নলেজে নেই।
এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোমবার এ নিয়ে তার সাথে বৈঠক করবেন। তবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা এভাবে একজন চিকিৎসককে নিয়মের বাইরে চিকিৎসা দিতে বলতে পারেন না।