#

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যখন একে একে দেশের মাদক সম্রাট ও ক্যাডারদের যখন বিচারের আওতায় আনছে ঠিক তখনই জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আশায় রয়েছেন দখিনের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে একজন রাসেল হাওলাদার।

#

বরিশাল সদর উপজেলার ৩নং চরবাড়িয়া ইউনিয়নে মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত রাসেল। দীর্ঘদিন ধরে লামছড়ি সহ গোটা চরবাড়িয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্র করে মাদক সম্রাট হিসেবে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন অনেক আগেই। এতে রাতারাতি হয়ে গেছেন তিনি বিপুল পরিমানের অর্থের মালিক।

আর সেই অর্থ দিয়ে গরমে এবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন রাসেল হাওলাদার ওরফে গাঁজা রাসেল।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গাজির খেয়াঘাট এলাকার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাভোগকারী তোফেল হাজী ছেলে মো: রাসেল হাওলাদার। প্রথমে গাঁজা বিক্রির মাধ্যমে মাদকের জগতে পদার্পণ করেন রাসেল। লামচড়ির কয়েজন স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে দিয়ে গাঁজা বিক্রি করতে তিনি। এসব শিক্ষার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে একাজ করাতেন রাসেল। এতে তাকে সহযোগীতা করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সহযোগী সংগঠনের নামধারী কয়েকজন কথিত নেতা। পরে রাসেল লামছড়ি এলাকায় শুরু করেন ফেন্সিডিল ও মরনেশা ইয়াবার ব্যবসা। ইয়াবা ব্যবসা শুরু করার কয়েকদিনের মাথাই রাসেলের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ! ক্রমশই বাড়তে থাকে রাসেলের মাদক ব্যবসার পরিধি। অস্তে আস্তে তিনি নিয়ন্ত্রনে নেয় গোটা চরবাড়িয়া এলাকা।

গাজির খেওয়াঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে রাসেল গড়ে তোলেন একটি ঘর। সেখানে বসে তিনি তার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। এরই মধ্যে রাসেলের সংগ্রহশালায় যুক্ত হয় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র। বেশ কয়েকজন যুবক দিন-রাত ওই ঘরটি অস্ত্র দিয়ে পাহারায় রাখতেন। এলাকাবাসী শুধু দেখতো এসব কার্যকালাপ কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় নি আজ পর্যন্ত।

যদিও রাসেল গাজার নাম ঘোছানোর জন্য ফেন্সেডিল আর ইয়াবার ডিলার হলেও এলাকার মানুষ তাকে পুরনো নামেই চিনে। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে রাসেলের বিক্রির সোর্স হিসেবে মহাবাজ এলাকারও কয়েকজনকে ব্যবহার করতো এবং নতুন করে আবারো করছে। তার হয়ে মাদক বিক্রি করছে চরআবদানীরও একজন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। একাধিকবার জেলবাস করলেও তারা মাদক বিক্রির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে মহাবাজ, চরবাড়িয়া আর চরআবদানী এলাকাও তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

রাসেল নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনায় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করেছেন। এছাড়া প্রতিনিয়ত তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অস্ত্রসহ এলাকায় মহড়া দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন ভোটার।

পরিচয় গোপন রাখার শ্বর্তে রাসেলের ক্যাডার বাহিনীর এক সদস্যের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদক এর সাথে। তিনি বলেন,‘৮নং ওয়ার্ডের রাসেল ভাইয়ের বিকল্প আর কিছু নেই। রাসের ভাই চাইলে চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ২১ তারিখ যত বড় গ্যাঞ্জামই হোক না কেন রাসেল ভাইকে মেম্বার বানাতে আমরা সবাই মাঠে আছি এবং থাকবো।’

স্থানীয় একাধিক ভোটার জানায়,‘রাসেল একজন মাদকব্যবসায়ী ও চিহ্নিত ক্যাডার, প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ আমরা যাতে সুষ্ঠভাবে এই এলাকায় ভোট দিতে পারি।’

থানা ও আদালত সূত্রে মামলার পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কাউনিয়া থানায় একটি মাদক মামলা হয় যার নং ১৬/২৭৯। একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলা নং ১৩/২৭৬। ১০ই মার্চ যে মামলাটি হয় তার নং ১৩/৬৭। ২০১৮ সালের ২০ই ফেব্রুয়ারি কাউনিয়া থানা মামলা নং ২৬/৫৬। একই বছরের ৬ জুন একই থানায় মামলা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জুন যে মামলাটি হয় তার নং ১৪/১২৭। ২০১৬ সালের ৯ই নভেম্বর মামলা নং ৮। ২০১৬ সালের ৫ই অক্টোবর কাউনিয়া থানা মামলা নং ৫। ২০১৫ সালের ১৪ জুন কাউনিয়া থানা মামলা নং ৮। ২০১২ সালে কাউনিয়া থানা মামলা নং ৪। এই প্রত্যেকটি মামলাই মাদকের। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কাউনিয়া থানা মামলা নং ১০/২৭৪। ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট কাউনিয়া থানা মামলা নং ১৬। ২৫ জুন ২০১৯ মামলা নং ২৯/১৮১। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর মামলা নং ৩০/২৩৪। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মারামারি ও হত্যা চেষ্টার একটি মামলা রয়েছে যার নং ৯। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। মামলার বাদী খালেদা পারভীন। ওই মামলায় রাসেল হাওলাদার, আল-আমিন (টোকাই), মামুন হাওলাদার, মামুন ফকিরসহ বেশ কয়েক জন আসামী। এই মামলাগুলোই প্রত্যেকটি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলোই নিস্পত্তি করা হয়েছে। আর বেশ কয়েকটি চলমান রয়েছে। রাসেলের মামলা সংখ্যা যতো বেশি তার অপরাধ প্রবণতা তার কয়েকগুন। তিনি সব সময়ই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে মাদক কারবারি করে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, গোটা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সকল মাদক সেবীদের একমাত্র মাদকের হাটের মালিক রাসেল। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক তুলে দিচ্ছে রাসেল। রাতে মাদক বহন ও নিরাপদে চলাচলের জন্য রাসেলের রয়েছে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা। সড়ক পথে চলাচল করলে যে কারো চোখে পড়তে পারে সে। এই কারনেই নদী পথকেই বেছে নিয়েছে মাদক সম্রাট রাসেল।

অপরদিকে রাসেলকে আটকের জন্য গোটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান করলেও তাকে আটক করা সম্ভব হবে না। কারন তালতলী থেকে সড়কের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে তার লোক লাগানো রয়েছে। কোন এক স্থান থেকে পুলিশ প্রশাসনের কেহ ওই এলাকায় ঢুকলেই সাথে সাথে তার কাছে সংবাদ চলে যায়। ফলে রাসেল চলে যায় তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ৮নং ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা জানায়,‘রাসেল দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম করে আসছে আমাদের এলাকায়, তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কারন যে মুখ খুলবে তাকেই পরতে হবে রোষানলে। এলাকার ময়-মুরুব্বি কাউকে মানেনা রাসেল।’

তারা আরও বলেন,‘রাসলে মেম্বার হওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে এলাকায় প্রভাব খাটাচ্ছে, অনেককে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যার মূল ব্যবসা হলো মাদক, সে যদি এলাকার মেম্বার হয় তাহলে যে আমাদের কি যে অবস্থা হবে বুঝে উঠতে পারতেছিনা।’

এক বিস্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাসেলকে মেম্বার বানাতে উঠেপড়ে লেগেছেন এসময়ের সুদ ব্যবসায়ী তোতা মিয়া, বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা খালেক প্যাদাসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। অর্থের বিনিময়ে ওই নেতারা রাসেলকে সমর্থন করছেন। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে কয়েকজন সুবিধাভোগী সাংবাদিক টাকার বিনিময়ে মাদকসম্রাট রাসেলকে ‘জনপ্রিয় নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সংবাদ প্রকাশ করছেন।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here