বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় রাতভর মাঠে সরব ছিল শত শত নেতাকর্মী, সকালেও তারা শ্রমিক লীগের মাধ্যমে বরিশাল নগরীর দুটি বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সকল গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের ও গ্রেফতার অভিযান শুরু করার পর পাল্টে যায় চিত্র। দুপুরের পর থেকে পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন পুলিশের হাতে।নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিজিবি ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা জোন থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি এসেছে। এছাড়া পিরোজপুর ও পটুয়াখালী থেকে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসেছেন।এদিকে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে বরিশাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ করেন মালিক সমিতির নেতা ও শ্রমিকরা। পরে ১৩ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে আবারো বাস চলাচল শুরু হয়।
এ ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহারিয়ার বাবুসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, দুটি মামলার মধ্যে একটির বাদি বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুনিবুর রহমান এবং অপরটির বাদি পুলিশ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মামলায় তার বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর পুলিশের দায়ের করা মামলায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওসি আরো জানান, দুটি মামলায় ৩০-৪০ জনের মতো নামধারী এবং কয়েক শ’ অজ্ঞাত আসামি রয়েছে।
এদিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ মেয়রের বাসভবন হঠাৎ করেই ঘিরে ফেলেন র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। এ সময় সেখানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের বাসার ভেতরে নেতাকর্মীরা যেতে চাইলে তাতেও পুলিশ বাধা দেয়। তবে কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে যান।

এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল রাতের ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের কেউ কেউ ওখানে অবস্থান করছেন। সেজন্য সেখানে যাওয়া, তবে সেখানে গিয়ে সেরকম কাউকে পাওয়া যায়নি এবং কাউকে সেখান থেকে আটকও করা হয়নি।
ঘটনার শুরু যেভাবে
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের গুলিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত।

এদিকে মেয়রের ওপর হামলার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থানা কাউন্সিলের প্রধান ফটকে এসে জড়ো হয়। পরে তারা বিক্ষুব্দ হয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্দরা বরিশাল পুটয়াখালী মহসড়কে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এসময় পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে হট্টগোল বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেইসাথে দফায় দফায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের স্টাফদের সাথে ঝামেলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। শুনেছি আনসার সদস্যরা গুলি চালিয়েছে। আর এ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনার জেরে থানা কাউন্সিলের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ওপর ময়লা ও ময়লা বহনকারী গাড়ি দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়েছে করপোরেশনের কর্মচারীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান যেটুকু জানিয়েছেন, তার বাসভবন এলাকায় কিছু লোক ব্যানার খুলতে আসে। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতের বেলা এভাবে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন তিনি। সেসময় আগত লোকদের সাথে বাগ-বিতণ্ডা হয় এবং তারা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অমান্য করে বাসভবনে প্রবেশ করতে উদ্যত হন। এসময় নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত আনসার বাহিনী গুলি ছোড়ে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সেময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। এসময় একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়। এছাড়া ইউএনও দাবি করেছেন, তার বাসভবনে দায়িত্বরত কয়েকজন আনসার সদস্যও আহত হয়েছে।
এছাড়া তিনি আরো জানান, ময়লা ও গাড়ি দিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কটি অবরোধ করা রাখা হয়েছে। সেগুলো সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মুনিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,
উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তারা আমাকে গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।
মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ছররা গুলি করা হয়েছিল। আমার গায়ে লেগেছিল, ব্যথা পেয়েছি। আমার গায়ে জ্যাকেট ছিল। সে সময় সাথের লোকেরা আমাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। তাদের গুলি লেগেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১০ প্লাটুন বিজিবি, সাথে অতিরিক্ত ১০ ম্যাজিস্ট্রেট
বরিশালে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একইসাথে মাঠে থাকবেন অতিরিক্ত ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনার পর