বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘কাউকে আওয়ামী লীগ করতে দেবে না, প্রশাসনের লোকজন সেই প্রক্রিয়া নিয়েছে।’ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তাকে এ কথা বলতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি তো আগেই বলেছি, ইঙ্গিত দিয়েছি যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে তারা। গুলি হইছে, আমাদের নেতা-কর্মীরা আহত হইছে। তাদের চিকিৎসা করাতে ঢাকা শহরে যাইতে দিচ্ছে না। মানে কোন পরিস্থিতিতে আছি, এটা কেমন কথা। যারা আহত হইছে তাদের গ্রেফতার করে রাখছে। আমরা পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই। আমি অপরাধী হয়ে থাকলে, আমাদের নেতা-কর্মীরা অপরাধী হয়ে থাকলে এখানে থাকার কোনো অধিকার আমার নেই। আমি রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেব। অপমান-অপদস্তের তো একটা সীমা আছে।’
ওই ভিডিওতে মেয়র আরো বলেন, ‘আমাকে তো অপদস্ত করে না, করে আওয়ামী লীগকে, করে সরকারকে। আমি প্রথম থেকেই বলছি এটি ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র। আমি সিটি করপোরেশনের একজন মেয়র। কিন্তু সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন মিলে কী করছে বুঝলাম না। মেয়র মানে কী? এটা মেয়রের ক্ষমতার কোনো বিষয়ও না। তারা গুলি করলে আমরা পাল্টা গুলি করবো এটাই মনে হয় চাইছিল। অথবা তারা যা করছে তাতে আমরা কেন মিছিল করি না, প্রতিবাদ সভা করি না এটাও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার, নৌকা মার্কার সরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আমি এখানে নাড়া দিলে পরে ক্ষতি ওনাদের হবে না, ক্ষতি হবে আমার দলের। দলের ক্ষতি করার আগে আমার সরাসরি রিজাইন দিয়ে চলে যাওয়া ভালো।’
এ দিকে গত বুধবার থানা কাউন্সিলে সংঘটিত ঘটনায় পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়ের করা দু’টি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন। ঘটনার পরের দিন বরিশালে আসেন। অথচ তিনি একটি মামলার ৮ নম্বর আসামি। এছাড়া মৃত এক ব্যক্তিও মামলার আসামি হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, ইউএনও মো: মুনিবুর রহমানের দায়ের করা মামলায় যে ২৮ জনকে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা, বাবার নাম এমনভাবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যেন বাদি তাদের প্রত্যেকের পূর্ব পরিচিত। এ ছাড়া ইউএনওর বাসভবনে সিসি ক্যামেরার যে ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল করা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট কয়েক মিনিটের। কিন্তু ঘটনা তো কয়েক ঘণ্টার। আবার সেই কয়েক মিনিটের ফুটেজে শুধু আনসারদেরই সরাসরি গুলি করতেই দেখা গেছে। ছত্রভঙ্গ করতে কোনো ফাঁকা গুলি করার বিষয় নেই, যেটা পুলিশ করে। আর যারা থানা কাউন্সিলে গিয়েছিল তারা তো নিরস্ত্রই ছিল। কিন্তু মামলায় বলা হয়েছে ‘মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র’ ছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি বুধবার রাতের এ ঘটনার পেছনে বিশেষ কোনো পক্ষ রয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো: ইউনুস বলেন, নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের কাজ হিসেবে সেদিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়েছিল বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ওই রাতে ইউএনওর বাসভবনে কেউ হামলা করেনি। রাতে বিভাগীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় আমিও ছিলাম। হামলা হলে ইউএনওর বাসভবনের একটি জানালার গ্লাসও ভাঙতো না? আবার যে গেট ভাঙার কথা হচ্ছে সেটি কোথায়? সব গেটই তো ঠিকই দেখেছি। ইউএনও নিজেই এর সাথে জড়িয়েছেন। নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন।