বরিশালের উজিরপুরে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে নিহত একজনের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
হামলায় নিহত দুজন হলেন উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ও একই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সাগর হাওলাদার (২৮)। তাঁরা পরস্পরের চাচাতো ভাই। গত শনিবার রাতে উপজেলার সাতলা পশ্চিমপাড় সেতু এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা হয়। এর মধ্যে ইদ্রিস হাওলাদার শনিবার রাতে এবং সাগর হাওলাদার রোববার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে নিহত ইদ্রিস হাওলাদারের স্ত্রী রেশমা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কিবরিয়া হাওলাদারকে (৩৮) প্রধান আসামি করে ২৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১২ জনকে। আজ মঙ্গলবার সকালে এজাহারভুক্ত আসামি কবির বিশ্বাসকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার অধিকাংশ আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন হাওলাদার (৪৮), তাঁর চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার (৪৬), সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কিবরিয়া হাওলাদার (৩৮), সাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস হাওলাদার (৫৪), সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক কবির বিশ্বাস (৩৫), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সোহেল হাওলাদার (৪২) প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদারের (২৮) সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতলা পশ্চিমপাড় ব্রিজের ঢালে পৌঁছালে সাতলা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে আসামিরা হামলা করেন। তাঁরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন। পিটিয়ে ও কুপিয়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিস হাওলাদারকে হত্যা করেন। মোটরসাইকেলের চালক সাগর হাওলাদারকে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করা হয়। বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ১০টায় সাগর মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস হাওলাদারের বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ মার্চ ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছিল প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় ইদ্রিস হাওলাদার মামলা করেছিলেন। তখন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও আসাদ হাওলাদার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।এ ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তাঁর চাচাতো ভাই আসাদ হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হত্যার ঘটনার পর থেকে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন।
উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়িক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ইদ্রিস হাওলাদার ও সাগর হাওলাদারকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইদ্রিস হাওলাদারের স্ত্রী রেশমা বেগম থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।