#

সাংগঠনিক ব্যর্থতা, অসাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নানা অনিয়মের অপকর্মের কারণে বিলুপ্ত করা হচ্ছে বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সুপারফাইভ কমিটি। পাশাপাশি তাদের অধীনস্ত ইউনিট কমিটিগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেছেন বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সাথে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

#

শনিবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দর সাথে অলনাইনে জুম কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তারেক রহমান এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে যুবদলের একাধিক সূত্র।

দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ‘সম্প্রতি যুবদলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বরিশাল বিভাগ সফরে আসেন। এসময় উত্তর জেলা যুবদলের অধীনস্ত বিভিন্ন ইউনিট থেকে উত্তর জেলা যুবদলের কার্যক্রম নিয়ে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিনিধি দল কেন্দ্রে অভিযোগ করেন। এরপর সাংগঠনিক সম্পাদক বাদে শোকজ করা হয় সুপার ফাইভ কমিটির চার নেতাকে।

যুবদলের একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, ‘২০১৭ সালে মোল্লা মাহফুজকে সভাপতি এবং সলাউদ্দিন পিপলুকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এদেরকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু উত্তর জেলা যুবদলের কমিটির মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে তিন বছর অতিক্রম করলেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রমেও তারা রীতিমত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তার মধ্যে উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক পিপলুর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ।

ইতিপূর্বে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই রাতে কুয়াকাটা থেকে ফেরার পথে লেবুখালীতে ৪৫ পিস ইয়াবা এবং এক বোতল মদসহ আটক হয়েছেন পিপলু। এসময় একই মাইক্রোবাস থেকে আটক করা হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাজিব আহসানকে। ওই ঘটনায় স্থানীয় থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয় এবং পুলিশ ওই দু’জনসহ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।

এর বাইরেও পিপলুর বিরুদ্ধে নিজ দলীয় অর্থাৎ ছাত্রদলের বরিশাল জেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লাভলুকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। পিপলু ছাড়া তার অপর তিন ভাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত। তাছাড়া সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অপরাধে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো পিপলুকে। কিন্তু নানা অপকর্মের অনুঘটক পিপলু তার বন্ধু ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহসানের আশীর্বাদে উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করেন।

অপরদিকে কমিটির সভাপতি মোল্লা মাহফুজের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নিজ দলের প্রতিপক্ষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা। অর্থের বিনিময়ে কামিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ। এছাড়া তিনি উত্তর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুস এর ঠিকাদারী কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। এ কারণে তার ঢাকায় থাকতে হয় নিয়মিত।

কমিটির অপর নেতা অর্থাৎ সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট দেওয়ান মনির বরিশালে থাকেন না। তিনি ঢাকায় থেকে আইনপেশার নিয়জিত রয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ দেওয়ান এর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে মাদক সম্পৃক্ততা ও নেতা-কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণের কারণে শো-কজ করা হয়। যদিও কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম হাওলাদার এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ খুঁজে পায়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। যে কারণে তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সারাদেশে যুবদলের কার্যক্রম নিয়ে শনিবার বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ওই বৈঠকে বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগুলো উত্থাপন করেন। এসময় তারেক রহমান উত্তর জেলা যুবদলের বিতর্কিত ওই কমিটি বিলুপ্তির নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে পাঁচ সদস্য’র কমিটি আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে পারেনি। এছাড়াও কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। তাই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওই কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন।

একই সাথে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পাশাপাশি আপাতত এই কমিটির অধীনস্ত আটটি ইউনিট কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেছেন। ভাইস চেয়ারম্যানের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ওই নেতা।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here