#

আহমেদ জালাল>> নতুন প্রজন্ম হোক সমতার লড়াইয়ের সারথি। সভ্যতা ও সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে হাজার বছরের লড়াই ও সংগ্রাম-তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব অনেকাংশে নতুন প্রজন্মের ওপর। নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে সামাজিক সংস্কার একটি বড় বাধা। নারী-পুরুষ সমতার লড়াই অনিঃশেষ; কিন্তু নারী ও পুরুষ যদি নিজ নিজ পরিসরে সচেতন হয়, সংবেদনশীল হয়; তাহলে সেই পথে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই সহজতর হয়। আবহমানকাল থেকে এ দেশের নারীরা যে সংগ্রাম, সাহস ও সক্ষমতা দেখিয়ে আসছে,তাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে নতুনতর প্রজন্ম।
আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত পেশায় নারীর অংশগ্রহণ দীর্ঘকাল এ দেশে নানা মাত্রায় নিরুৎসাহিত ছিল। সেই অর্গলও ক্রমে ভেঙে চলছে নতুন প্রজন্মের নারীরা। আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদ সচিব হিসেবে নারীর দৃপ্ত পদচারণায় উদ্দীপ্ত করে। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনেও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী।

#

নারীর নানা ক্ষেত্রে ‘অগ্রগতি’ সত্ত্বেও প্রশ্ন হচ্ছে-নারীর অবদান পরিবারে,সমাজে ও রাষ্ট্রে কতটা স্বীকৃতি পাচ্ছে? সমাজের বহু ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ ও পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো নারীর অগ্রগতির পথে পথে যে কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে,তা আমরা কতটা অপসারণ করতে পেরেছি?

এখনও যেভাবে নির্যাতিত নারীরা অব্যাহত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, কখনো কখনো বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ যা খুবই বেদনার। এখনও যেভাবে ফতোয়া বা কথিত সালিশের শিকার নারীই হয়; তা যথেষ্ট হতাশা ও উদ্বেগের। এত পরিকল্পনা, কর্মসূচি সত্ত্বেও এখনও সারাদেশের গ্রামে শহরে ধর্ষণ বা অ্যাসিড নিক্ষেপের মতো অপরাধ কেন নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। বরংচ ক্রমেই যেনো পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে নারীর প্রতি সহিংসতা।
নারী-পুরুষের সমতার জন্য পুরুষদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এটা স্বাভাবিক যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গি থাকবেই। সমাজের কাঠামো বদল না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা চলতেই থাকবে। আদিম সমাজ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলো, তখনো কৃষিতে নারী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখল। পরবর্তীতে পুঁজিবাদ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হলো। এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চলছে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার জন্য নারীকেই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাকে এগিয়ে আসতে হবে, অন্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ক্ষেত্রেও নারীকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীরা অনেক সময় ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে থাকলেও নিজে ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে না। সেখানেও সে পুরুষ দ্বারা চালিত হয়। নারী-পুরুষের সমতার লড়াই কিন্তু নারীর একার নয়। এটা সমাজের লড়াই, দৃষ্টিভঙ্গির লড়াই। নিছক অঙ্গীকার নয়; নিজের জীবন, পরিবার ও সমাজে নিজের সামর্থ্যের মধ্য দিয়ে পুরুষ প্রজন্ম নারী প্রজন্মের পাশে দাঁড়াবে। নারী ও পুরুষ প্রজন্ম মিলেই গঠন করবে নারীবান্ধব ও বৈষম্যহীন এমন সমাজ।
————————————–
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান, রণাঙ্গণের মুখপত্র ‘দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ’।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here