ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আগামী বুধবার (১৪ অক্টোবর) থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে।
সোমবার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২০’ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা নিয়ে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময়সীমা ২২ দিন করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে কোনোভাবেই দেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণের অবৈধ প্রচেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না। এ সময় ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে কোনোভাবেই মা ইলিশ আহরণ করতে দেয়া হবে না। মা ইলিশ থাকতে পারে এমন নদীতে কোনো নৌকাকে মাছ ধরতে দেয়া হবে না। নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহলের পাশাপাশি অত্যাধুনিক উপায়ে মনিটর করা হবে যেন কোনো নৌকা বা জাহাজ ইলিশ ধরতে না পারে। এমনকি বিদেশ থেকে কোনো মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌযান আসলে সেটাকেও আইনানুগ প্রক্রিয়ায় আটক করা হবে।’
ইলিশের প্রাচুর্য, স্বাদ ও সহজলভ্যতার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে চান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের বেশি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়েছে। ইলিশের আকার ও স্বাদ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো। ইলিশ একটা সময় দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছিল, সেই ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন বিভিন্ন দফতর-সংস্থা, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, মাঠপ্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে এ বছর ইলিশ উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘এ উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য অধিদফতর সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’
‘৩৬ জেলার ১৫২ উপজেলায় আমাদের কর্মসূচি থাকবে। যারা ইলিশ আহরণ বা বিক্রয় করতে পারবেন না, তাদের আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যাতে মৎস্যজীবী, মৎস্য আহরণকারী বা এ প্রক্রিয়ায় জড়িতে একজন মানুষও খাবারের সংকটে না থাকে। এ বছর আমরা সশরীরে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ অন্যদের সঙ্গে মাঠে থাকব, যাতে ইলিশ উৎপাদনের সাফল্য কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বরফকল খুলতে দেয়া হবে না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চাই ইলিশ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছাবে যাতে আমাদের সকল মানুষ ইলিশ খেতে পারে। ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত ইলিশ উৎপাদন হওয়ার পর আমরা বাণিজ্যিকভাবে রফতানির চিন্তা করব। এই মুহূর্তে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রফতানির কথা আমরা ভাবছি না। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ইলিশের উৎপাদন ও সফলতা এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যেদিন ইলিশ রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে আমরা সক্ষম হব।’
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ্ মো. ইমদাদুল হক, সুবোল বোস মনি ও শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।