শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল নগরীতে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে নিষ্ক্রিয় এ গ্যাং পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত করছে। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে তারা। ফলে গ্যাং কালচার নিয়ে নতুন করে নগরবাসীর মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বরিশাল মহানগর এলাকায় কোন ধরনের গ্যাং কালচার চলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। যারাই গ্যাং কালচার করতে আসবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও শনিবার রাতের ঘটনাটি দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে দাবি করেছেন নগর পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অপরদিকে, গত শনিবার রাতে ‘আব্বা গ্রুপ’ নামক কিশোর গ্যায়ের সশস্ত্র হামলার শিকার সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুকে শনিবার মধ্য রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সেখানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাছাড়া এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই হামলার ঘটনায় থানায় কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়ে পুলিশ। জানাগেছে, ‘২০১৯ সালে বরগুনায় কলেজ ছাত্র রিফাত শরীফের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় গোটা দেশ কেঁপে ওঠে। ওই ঘটনার পর থেকেই দেশ জুড়ে কিশোর গ্যাং দমনে মাঠে নামে র্যাব এবং পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাগুলো।
দেশ জুড়ে ধরপাকড়ের ফলে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে কিশোর গ্যাং। এতে স্বস্তি ফেরে সাধারণ মহলেও। তবে হঠাৎ করেই বরিশাল নগরীতে ফের গ্যাং কালচার শুরু করেছে কিশোর গ্যাং। সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল মহড়া, ছিনতাই, মাদক বহন এবং হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত করছে তারা। সবশেষ গত শনিবার রাতে বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ সরকারি বরিশাল কলেজের সামনে ‘আব্বা গ্রুপ’ নামের কিশোর গ্যাং সশস্ত্র হামলা করে ওই কলেজটির ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপু’র ওপর।
তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম এবং সেখানকার একটি হোটেল ভাংচুর করে সন্ত্রাসীরা। টিপু’র অনুসারী মো. রুবেল জানিয়েছেন, ‘টিপু কালীবাড়ি রোডের ফাহিম হোটেলে খাবার খাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ করেই আলোচিত কিশোর গ্যাং নগরীর বগুড়া রোডের সৌরভ বালা, তানজিম, রাজিন, সাগরসহ ১০-১২ জন টিপু’র ওপর সশন্ত্র হামলা করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
তার মাথায় ছয়টি এবং শরীরে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। টিপু’র রাজনৈতিক এবং বন্ধু মহল জানিয়েছে, ‘হামলার ঘটনাটি কোন দলীয় কোন্দল নিয়ে হয়নি। সিনিয়র-জুনিয়রকে কেন্দ্র করে হয়েছে। বগুড়া রোডের কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য তানজিম ও তার ভাইয়ের সাথে সিনিয়র জুনিয়ার বিষয় নিয়ে টিপু’র কথা কাটাকাটি চলে আসছিলো। সম্প্রতি এ নিয়ে টিপু’র সাথে তাদের হাতাহাতিও হয়। এর জের ধরেই শনিবার রাতে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান তারা। তারা আরও বলেন, ‘হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দলীয় কোন পরিচয় নেই। তারা একেক সময় একেক দলের কথিত নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে থাকে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘হামলাকারি কিশোর গ্যাং সৌরভ বালা গ্রুপের দৌরাত্ম্য দীর্ঘ দিন ধরেই। মাঝে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার কারণে নীরব থাকলেও বর্তমানে তারা নগরীর সদর রোড, কালীবাড়ি রোড, ফকিরবাড়ি রোড, বগুড়া রোড, বটতলা এবং অক্সফোর্ড মিশন রোডসহ আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। তাছাড়া এ গ্রুপের বিরুদ্ধে ইতিপূূর্র্বে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো। এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘রোববার রাত পর্যন্ত কুপিয়ে জখমের ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি। তবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাদের গ্রেফতারে আমাদের তিনটি টিম কাজ করছে। খুব শীঘ্রই এদের আইনের আওতায় নিসে আসা হবে জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কিনা সেটা নিশ্চিত নই, তবে এদের বিরুদ্ধে পূর্বে থেকেই অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘নগরীর আলোচিত আব্ব গ্রুপ’ই নয়, এর বাইরেও নগরীর জিলা স্কুল, ব্রাউন কম্পাউন্ড রোড এবং গোড়াচাঁদ দাস রোড ও বিএম কলেজ এলাকায় রয়েছে পৃথক দুটি কিশোর গ্যাং। যাদের একটি বিএম কলেজের অভ্যন্তরে এবং অন্যটি নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে আড্ডা দেয়।
সেখানে বসেই মাদক সেবনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত করে আসছে তারা। এদের বিরুদ্ধ দ্রুত অভিযান প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, ‘শনিবার রাতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দলীয় কোন্দল থেকে ঘটেছে বলেছে আমি শুনেছি। এর আগে তার ছোট ভাই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত রাফসান আহমেদ জিতুকেও একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি বরিশাল মহানগরীতে গ্যাং কালচারের সুযোগ নেই। আর শনিবারের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে সে হোক কিশোর গ্যাং বা যুবক।