বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে প্রায় এক মাস জুড়ে ভয়াবহ ডায়রিয়ার প্রকোপের পর পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলে বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কর্মকর্তারা বলছেন পানিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া, খালে ও নদীর পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে এ বছর হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি জেলায় ডায়রিয়া ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ অঞ্চলের ছোট বড় হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব হয়ে যায়।
“পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমার মায়ের জন্য স্যালাইন পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না। পুরো জেলায় কোথায় পাওয়া যায়নি স্যালাইন,” মায়ের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছিলেন পটুয়াখালীর রোমেনা আক্তার।
কর্মকর্তারা বলছিলেন বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় তুলনামূলক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা: বাসুদেব কুমার দাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মারা গেছেন দশ জন।
“প্রতিবছর এ সময়ে বিশেষ করে এপ্রিল মে মাসের দিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে কিন্তু এবার তুলনামূলক অনেক বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলেই আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি থেকে টিম এসে পরিস্থিতি দেখে কিছু কারণ উদঘাটন করেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
ছবির ক্যাপশান,ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে এমন করে শয্যা তৈরি করে চিকিৎসা নিয়েছে অনেক রোগী
তিনি বলেন রোগীদের মধ্যে ৭১ ভাগ এসব পানি ব্যবহারের তথ্য দিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষকদের।
ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্যালাইন সংকট মোকাবেলা অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বরিশাল, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার জন্য বৃহস্পতিবার ৬০০ ব্যাগ আইভি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য ৩৫ হাজার স্যালাইন যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম বিবিসিকে বলছেন, জেলায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭৯ জন ও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৫৭ জন।
“গত সাত দিনে ২০১৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত এক মাসে মোট ৪৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আজ থেকে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। এর আগে প্রতিদিন তিনশোর মতো রোগী হাসপাতালে আসতো। সেখানে আজ ১৭৯ জন এসেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন জেলাজুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে প্রশাসনের সহায়তায়।