TT Ads

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৃত ব্যক্তির নাম দিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার আসামি চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম চুন্নু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এরপরও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
শাহ আলম চুন্নু বরিশাল সদর উপজেলা ১০ নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের সুবিধাভোগী দোষর ও ৩নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন করে তার রাজনৈতিক পরিচয়। আওয়ামী লীগের সময় বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম জাকিরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন সময়কালীন উপজেলা রাজনৈতিক কমিটির সমন্বয়ক ছিল দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক শাহ আলম চুন্নু। বর্তমানে হয়ে গেছে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। নিজের অপরাধ ও দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিএনপির নাম ব্যবহার করে চলছে। তবে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বিষয়টির ব্যাপারে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
ইউপি সদস্য থাকা কালীন সময়ে গত বছর খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল চুরির অভিযোগ স্মারক নং-৪৬.০০.০৬০০.০১৭.০০৩.২০-১৫৬ আদেশ বলে ইউপি সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ শাখার সহযোগিতা ও হাই কোর্টের রিটপিটিশনের মধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, তার পিতা ডিলার ইউসুফ আলী সিকদার চাল চুরির অভিযোগে ডিলার শিপ থেকে বহিস্কার হওয়ার পরে হাই কোর্টে রিট পিটিশনের মাধ্যমে ফের ডিলার শিপের দায়িত্বে আছেন। প্রকল্প আত্মসাতের প্রমাণিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অন্ধকারে পরে আছে। দুদকের করা মামলা চলমান থাকা কলীন সময়ে ফের অর্থ বছরে তিনটি প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে কমিটি দিয়েছে, চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ মেহেদী হাসানের সার্বিক সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী অফিসে। এমনকি গত বছর রাস্তার নাম দিয়ে প্রকল্প নিয়ে কাজ না করে, বিল উত্তোলণ করা রাস্তা ফের চলতি বছরে ওই রাস্তায় প্রকল্প দিয়েছে দুর্নীতিবাজ ইউপি সদস্য শাহ আলম চুন্নু।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সিদ্ধ হস্ত সচিব মোঃ মেহেদী হাসান অনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতা ও সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে।
মৃত ব্যাক্তির নামে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, সাহেবেরহাট শাখায় হিসাব নং-০৩৩১৯০১০১৫৪০৫ থেকে শ্রমিক মজুরি বাবদ প্রতারণার আশ্রায়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদাচরনের মাধ্যমে চেক/ভাউচারে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের সতত্যা পেয়ে গত বছর তার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সমম্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মনিরুন নেছা।

মামলার এজাহারের তথ্য মতে, মো. শাহ আলম (চুন্নু) দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত মামলায় শ্রমিক মজুরি বাবদ ১৪ হাজার ৫শত টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি মো. শাহ আলম (চুন্নুর) বিরুদ্ধে ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিক আবু সুফিয়ানের মৃত্যুর পর তার নামীয় সোনালী ব্যাংক পিএলসি সাহেবের হাট শাখা থেকে প্রতারণার আশ্রায়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদাচরনের মাধ্যমে চেক/ভাউচারে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুনীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় মামলা রুজু হয়।

দুদকের আইনজীবী বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘দুদকের করা মামলা অজামিনযোগ্য। শাহ আলম চুন্নুর বিরুদ্ধে মৃত্যুর ব্যক্তির নামে ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দুদক যদি মনে করে তবে তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে। এক্ষেত্রে দুদক চাইলে পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারে।’
মামলার পরও শাহ আলম চুন্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়নি জানতে দুদকের সমম্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহপরিচালক মনিরুন নেছার সঙ্গে একাধিক বার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে উপ-পরিচালক এইচ.এম আখতারুজ্জান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি আদালতে আমাদের মামলার কপি দিয়ে আরও একটি মামলা করেন।
দুদকের মামলার বিষয়ে পরিচালক মোঃ মোজাহার আলী সরদার বলেন, আপনি বিষয়টি উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করেন।
সম্প্রতি দুর্নীতিবাজ ইউপি সদস্য শাহ আলম চুন্নু টিসিবি ডিলারশিপের জন্য শিকদার ট্রেডার্স প্রোপাইটার তার স্ত্রী মোসা: হাসিনা বেগমের নামে আবেদন করে টিসিবির কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরিত চিঠিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
উপজেলা পরিষদের সূত্রমতে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সার্বিক সহযোগিতা ও চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের জোরালো সুপারিশের পরিপেক্ষিতে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ এবং বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী সিকদার ট্রেডার্স এর প্রোপাইটার মোছাঃ হাসিনা বেগম প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী না হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যা তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন টিসিবির প্রধান কার্যালয় প্রেরণ করেন।
তবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে টিসিবি সূত্র দাবি করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলম চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে দুই একটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।

TT Ads