TT Ads

 

সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সীমাহীন সম্পদ, জমি–বাড়ির বিস্তার, জাল দলিল, বেনামি লেনদেন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে যশোরের ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রার শাহীন আলমকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্নের ঝড় বইছে। তার জীবনযাত্রা, সম্পদের আকার ও আর্থিক প্রভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে স্থানীয় মহলে তাকে এখন “অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক” হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অস্বাভাবিক সম্পদের বিস্তার—অভিযোগের মূল কেন্দ্র

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুর ও ভাটারা এলাকাকে কেন্দ্র করে ডেভেলপার ও ভূমি ব্যবসায়ী চক্রের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে। এই অর্থ থেকেই গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জমি ও ভবন কেনা হয়।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের বড় বেরাইদে দুইটি বাড়ি, লালবাগ–কামরাঙ্গীরচরে ফ্ল্যাট, সাভার–রূপগঞ্জ–কেরানীগঞ্জে জমি—সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিসর এক সময়ের সাধারণ সরকারি কর্মচারীর জন্য অস্বাভাবিক বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে।

পরিবারকে সম্পদের আড়াল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—নিজের সম্পদ গোপন করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মা, ভাই, স্ত্রী এমনকি শ্বশুর–শাশুড়ির নামেও জমি কিনেছেন। কাশিয়ানীর বিভিন্ন মৌজায় শুধু শ্বশুর–শাশুড়ির নামেই ৪০ বিঘার বেশি জমির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব জমির অর্থায়নও শাহীন আলমের মাধ্যমেই হয়েছে বলে অভিযোগ।

সম্পদ বিবরণীর নির্দেশ জারি হতেই দ্রুত সম্পদ স্থানান্তর

অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশের পর হঠাৎ করেই নিজের ও স্ত্রীর নামে থাকা বহু জমি শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। যে পরিমাণ অস্থিরতা, তৎপরতা ও গোপন স্থানান্তর ঘটে, তা তার প্রকৃত সম্পদ নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন তোলে।

আয়-ব্যয়ের হিসাব দায়সারা—অভিযোগ আরও জোরালো

আয়কর নথিতে তিনি মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকার আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু তার নামে–বেনামে যে বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ, তা এই সামান্য আয় দিয়ে কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা, যা তার দৃশ্যমান সম্পদের সামান্য অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে।

জাল দলিল, ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ

ঝিকরগাছা এলাকার অধিগ্রহণকৃত জমি নিয়ে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে দলিল নথিভুক্ত করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নতুন নয়। পূর্বের সাব-রেজিস্ট্রার দলিলটি ফেরত দিলেও শাহীন আলম যোগদানের পর প্রতারণার মাধ্যমে এটি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
কর্মজীবনের বিভিন্ন জায়গায় ভূয়া দলিল সৃজন, ঘুষ গ্রহণ এবং বেনামী রেজিস্ট্রি অনুমোদনের মতো কর্মকাণ্ডে তিনি বহুবার সমালোচিত হয়েছেন।

বিলাসী অভ্যাস ও নগদ অর্থ পরিবহনের অভিযোগ

প্রতি সপ্তাহে বিমানে যশোর–ঢাকা যাতায়াত, বিলাসী খরচ এবং ঢাকায় ফেরার সময় ব্যাগভর্তি নগদ অর্থ বহনের অভিযোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। একজন সরকারি কর্মচারীর এ ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাড়ি, ভবন, ফ্ল্যাট—সব মিলিয়ে সম্পদের অস্বাভাবিক পাহাড়

ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার নামে দুটি ১০ তলা ভবন, মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বিভিন্ন জেলায় প্লট ও দোকান—সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ সাধারণ সরকারি বেতনের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সম্পদ বিবরণী বর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্বের অভিযোগ

সম্পদ বিবরণীর নির্দেশ জারি হলে সাব-রেজিস্ট্রারদের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসময় সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি–ধামকিও দেওয়া হয়, যা আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি

অভিযোগগুলোর বিষয়ে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

TT Ads