TT Ads

 

নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এক ঝাড়ুদারের অবৈধ সম্পদের পাহাড় এখন পুরো নগরজুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি নিম্নপদে কর্মরত থেকেও অবৈধ বাংলা মদের ব্যবসার মাধ্যমে কোটিপতি বনে যাওয়া প্রদীপ নামের ওই কর্মচারী দুর্নীতি, মাদক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
নাজির মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা প্রদীপ সম্প্রতি কাউনিয়া এলাকার ছোট মিয়া গলিতে জমি কিনে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের ওপর দুইতলা বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার সরকারি আয়ের সঙ্গে এই সম্পদের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বিলাসবহুল আসবাবপত্র, একাধিক মোটরসাইকেল, নগদ অর্থ ও অভিজাত জীবনযাপন স্পষ্ট করে দিচ্ছে—এই অর্থ বৈধ উপায়ে অর্জিত নয়।
দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোগ রয়েছে, প্রদীপ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধ বাংলা মদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। নাজির মহল্লায় তার মদ বিক্রির আস্তানাকে ঘিরে নির্দিষ্ট পাহারাদার বাহিনী মোতায়েন থাকে, যারা প্রশাসনের গতিবিধির আগাম তথ্য দিয়ে ব্যবসা নির্বিঘ্ন রাখে। এর ফলে পুরো এলাকায় মাদক, বিশৃঙ্খলা ও অপরাধপ্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—আইনে কোথাও মদ বিক্রির অনুমতি নেই। কিছু ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট শর্তে মদ্যপানের সীমিত অনুমোদন দেওয়া হলেও বাণিজ্যিকভাবে মদ বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। সেই হিসেবে প্রদীপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।
তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—একজন সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার কীভাবে বছরের পর বছর প্রকাশ্যে অবৈধ মদের ব্যবসা চালিয়ে গেল? কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠল? কেন এখনো পর্যন্ত কার্যকর অভিযান বা সম্পদ জব্দের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই?
এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রদীপের আয়কর নথি, ব্যাংক হিসাব, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণের অর্থের উৎস এবং নামে-বেনামে থাকা সম্পদের বিস্তারিত অনুসন্ধান জরুরি। সরকারি বেতনের সঙ্গে বাস্তব সম্পদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলেই বিপুল অস্বাভাবিকতা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরবাসীর দাবি—দুদক অবিলম্বে এই ঝাড়ুদার-কোটিপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করুক, অবৈধ সম্পদ জব্দ করুক এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায় নির্ধারণ করুক। তা না হলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন দুর্নীতিবাজদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেই পরিচিত হয়ে থাকবে, আর আইন ও নৈতিকতার প্রশ্ন আরও গভীর সংকটে পড়বে।

TT Ads