TT Ads

 

সরকারি স্থাপনা নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে যাঁর দায়িত্ব, সেই কর্মকর্তাই যদি দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে যান—তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়ে। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভায় কর্মরত উপ-প্রকৌশলী মো. মামুন খান মাত্র ২২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেও অল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে।
হাতে আসা তথ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১০ম গ্রেডভুক্ত এই কর্মকর্তা ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অর্থেই তিনি জমি, বাড়ি, গাড়ি এবং পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় একাধিক হোটেল ও রিসোর্টে শেয়ার কিনেছেন বলে জানা গেছে।
কুয়াকাটায় রিসোর্ট, জমি ও শেয়ারের পাহাড়
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মামুন খান কুয়াকাটার হোটেল সাম্পান অ্যান্ড রিসোর্টে প্রায় ২০ লাখ টাকার একটি শেয়ার এবং হোটেল রোমান্টিকায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার দুটি শেয়ারের মালিক। এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ জমিও তাঁর নামে রয়েছে।
আরও জানা গেছে, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল (ক্রমিক ৫১৮২, বহি-১, দলিল নং ৫১৭৯/২২) অনুযায়ী ২০২২ সালে ৯ জন শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে মামুন খান ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন, যার মোট মূল্য দেখানো হয় ৪৮ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে ওই জমির খাজনাও পরিশোধ করেছেন তিনি।
ব্যাংক লেনদেনেও মিলছে অস্বাভাবিকতা
হোটেল সাম্পান অ্যান্ড রিসোর্টের অনুকূলে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের একটি হিসাবে ২০২৩ সালের বিভিন্ন তারিখে মামুন খানের পক্ষ থেকে একাধিকবার অর্থ জমার তথ্য পাওয়া গেছে। ২ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার, ৫ মার্চ এক লাখ, ২৯ মার্চ ৪০ হাজার এবং ২৬ জুন ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। মাত্র ২২ হাজার টাকা বেতনের একজন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে এই ধরনের লেনদেন স্বাভাবিক কি না—সে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।
“সবাই জানে, কিন্তু কেউ মুখ খোলে না”
স্বরূপকাঠি পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন,
“উপ-প্রকৌশলী হিসেবে মামুন খান ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা, অথচ উল্টো ঠিকাদাররাই তার কাছে জিম্মি। কাজ পেতে হলে কমিশন দিতে হয়—এটা ওপেন সিক্রেট।”
স্থানীয় এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“কমিশন ছাড়া ফাইল নড়ে না। এই টাকাতেই আজ তিনি কোটিপতি।”
প্রশ্নের মুখে সরকারি বিধিমালা
সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবসায় যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরূপকাঠি পৌরসভার পৌর প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান,
“আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর উপ-প্রকৌশলী মামুন খান কোনো ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য লিখিত অনুমতি নেননি।”
এ বিষয়ে মামুন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের ব্যাখ্যা না দিয়ে উল্টো তথ্যদাতার পরিচয় জানতে চান এবং প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
দুদকের তদন্ত দাবি
এলাকাবাসী ও পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জরুরি তদন্ত প্রয়োজন। তাঁদের ভাষ্য, সরকারি বেতনের সঙ্গে সম্পদের এই অস্বাভাবিক ব্যবধান রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
এখন দেখার বিষয়—অভিযোগের পাহাড়ের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দুদক আদৌ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় কি না, নাকি ২২ হাজার টাকার বেতনে কোটিপতি হওয়ার এই রহস্য চাপা পড়েই থেকে যায়।

 

সূত্র: দৈনিক সময়ের বার্তা

TT Ads