#

 

#

নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও খেলাধুলা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার রসুলপুরের ফ্রি আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে দুটি লোহার খুঁটিতে টানানো সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয় (ওপেন লাইন শাখা, সৈয়দপুর)। একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা বিদ্যালয় ভবনের পাশেই সংগঠনটির কার্যালয়। আর তিনতলা ভবনে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের বিদ্যালয়টি সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মূল গেট ও বড় করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করার ‍উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে ওয়াল নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবি, বিদ্যালয়ের জায়গাটি তাদের। তারা জমি ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে ৩ তলা ভবন নির্মাণ করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা রেলওয়ে কারখানার কর্মী হওয়ায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ১৯৫২ সালে রেল বিভাগের জমিতে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়ের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আওয়ামী লীগের শ্রমিক ফ্রন্ট রেলওয়ে শ্রমিক লীগের (ওপেন লাইন) শাখা। সেসময় থেকেই এই সংগঠনের নেতারা দাবি করে আসছেন বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা তাদের। কেননা সেটি রেলের জমিতে অবস্থিত।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২০৯ জন শিক্ষার্থী ও ৯ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। সবাই শিক্ষিকা হওয়ায় এবং বিদ্যালয়ের ভেতর শ্রমিক লীগের কর্মীদের উপস্থিতি থাকায় মাঠে আয়োজিত যেকোনো অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বলে জানান।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক শিক্ষার্থী মান মূল্যায়নে প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার শতভাগ। ২০২২ ও ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলা পর্যায়ে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় তারা রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বিদ্যালয়টির সামগ্রিক সফলতায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০০৭ সালে এখানে একটি অত্যাধুনিক ৩ তলা একাডেমিক ভবন প্রতিষ্ঠা করে দেয়।

পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, মাঠটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে খেলাধুলা করতে না পেরে টিফিনের সময় আমরা ক্লাসে অলস বসে থাকি। আমাদের একটা বড় মাঠ থাকলে ভালো হতো। চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বলে, বিদ্যালয় মাঠে অনেক লোকের আনাগোনা থাকে। তাই আমাদের মাঝে ভয় কাজ করে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা পারভিন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত। রেলের জমিতে অবস্থিত হলেও সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৈধতা পাওয়ার পরই ২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এখানে নতুন একটা ৩ তলা একাডেমিক ভবনের অনুমোদন দেয়। এখন শ্রমিক লীগের কার্যালয় থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠটি ছোট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আমরা কাছের ফিদা আলী ইন্সটিটিউট মাঠে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় বাচ্চাদের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক সংগঠনটির নেতারা প্রতিষ্ঠানটির মূল গেট ও নতুন করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিদ্যালয়টিকে জায়গা দিয়ে এখন নিজেরাই অপরাধী হয়ে গেছি। আমাদের সংগঠন জমি ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে বিদ্যালয়ের জন্য ৩ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।

আমরা জমি দান করার আগে উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা একটি চুক্তিতে উপনীত হয় যে, উভয়েই নিজ নিজ কর্মসূচি এই মাঠে আয়োজন করতে পারবে। আমরা দিনের বেলা সংগঠনের অফিসে যাই না কারণ সেসময় আমাদের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সন্ধ্যার পর যাওয়ার সুযোগ হয় তখন যাই। আর তখন তো বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মণ্ডল বলেন, আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছি। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here