এস এম মিরাজ//
বরিশালের আমানতগঞ্জ ভূমি অফিস—যে অফিসের দরজায় সাধারণ মানুষ ন্যায়ের আশায় সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে, সেই দরজার ভেতরেই নাকি চলছে ঘুষের কদর্য কারবার। অভিযোগের তীর সোজা গিয়ে ঠেকেছে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ খান–এর বুকে। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে চাপা থাকা ক্ষোভ এবার মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষের।

কথা বলছিলেন ভুক্তভোগী মোঃ আবু সালে আহমেদ। তার কণ্ঠে ক্ষোভ, তবু এক ধরনের ভাঙা অসহায়ত্ব—
১৩ নভেম্বর তিনি কাউনিয়া মৌজার জেল নং ৪৭-এর ৩০৬৮ খতিয়ানের দুইটি নামজারি করাতে অফিসে গেলে, কর্মকর্তা মাসুদ নাকি চেয়ে বসেন ৭,০০০ টাকা ঘুষ। আইন অনুযায়ী যেখানে সরকারি ফি মাত্র ১,১৭০ টাকা, সেখানে অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা দাবি—এ যেন প্রশাসনের গায়ে বসে থাকা কালো ছায়া। অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি ৪,০০০ টাকা দিয়ে নামজারি করান।

এ অভিযোগ নতুন নয়। তার আগে জেল ৪৮, আমানতগঞ্জ মৌজার ভিপি সম্পত্তিতে নাকি তিনজনের নামে ভুয়া খতিয়ান খুলে খাজনা কেটে দেওয়ার মতো ভয়ংকর দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের তালিকা যেন দিনে দিনে ফুলে–ফেঁপে পাহাড় হচ্ছে।

অবশ্য মাসুদ খান সব অভিযোগ অস্বীকার করে এক কথায় বলেন—
“এসব সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন।”
সরকারি কর্মকর্তা যখন এমন সোজা কথায় দায় ঝেড়ে ফেলেন, তখন জনগণের জন্য আর কীই বা অবশিষ্ট থাকে?

স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন,
“ভূমি অফিসে গেলে হয়রানি ছাড়া কিছুই নেই। টাকা না দিলে কোনো কাজই হয় না। আইন আছে বই কি—তার ব্যবহার কই?”

অমানতগঞ্জের মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে—
যে অফিসে তারা সেবা নিতে যায়, সেই অফিস যদি হয় টাকা–চালিত, তবে ন্যায়বিচার কোন দরজায় পাওয়া যাবে?

ঘুষের ঘূর্ণি আর দুর্নীতির দমবন্ধ অন্ধকারের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষ একটাই দাবি তুলেছে—
দ্রুত তদন্ত, কঠোর ব্যবস্থা এবং ভূমি অফিসে স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা।

দুর্নীতি যদি শেকড় গেঁড়ে বসে, তবে ন্যায় কোথায় দাঁড়াবে?
অমানতগঞ্জের মানুষ আজ সেই প্রশ্নের উত্তর অপেক্ষায় বসে আছে।

 

এস এম মিরাজ//
চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বহুদিন ধরে জিম্মি ছিল ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি চুন্নু এবং তার ভাই পান্নার দৌরাত্ম্যে। সরকারি সম্পদ লুট, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস—তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর তারা প্রকাশ্যে সরকারি বৈদ্যুতিক তার চুরি করলেও ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।

সেই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের আস্তানা ফাঁস হলো অবশেষে। চুন্নু ও পান্নার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সরকারি বৈদ্যুতিক তার। আরও জানা গেছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভোলা-বরিশাল বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের বহু কোটি টাকার তার চুরি করে পাচার করে আসছিল। যে প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ ছিল কয়েকশো কোটি টাকা—সেই লাইনের তার কেটে একের পর এক বিক্রি করেছে তারা।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে সরকারি বৈদ্যুতিক তার কেটে নেওয়া, পাহারাদারদের ভয়ভীতি দেখানো, এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখা—সবই করত প্রকাশ্যে। তাদের বিরুদ্ধে আগে বহু অভিযোগ উঠলেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে তারা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযানের খবর পেয়ে চুন্নু–পান্না গং রাতারাতি পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর ভাষ্য—“ওরা এখানে ছোট সরকার ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই বিপদ।”

প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনাকে ‘বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পলাতক দুই ভাইকে গ্রেপ্তারের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে এবং এ চক্রে জড়িত আরও যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এলাকাজুড়ে এখন একটাই দাবি—
এই তারচোর সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।

 

বরিশালে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দুই যুবক ভাটার খাল এলাকার হাকিম আলীর ছেলে
মোঃ মামুন রেদোয়ান,পলাশপুর এলাকার সালাম মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা
কে স্থানীয় জনতা আজ মঙ্গলবার ( ৯ ডিসেম্বর) আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নেতৃত্বে ১৫–২০ জনের একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় করে আসছিল। সম্প্রতি এদের কাছে ব্লাকমেইলের শিকার হন হাসপাতাল রোডের খন্দকার ফার্নিচারের
স্বত্বাধিকারী মোঃ লিয়াকত আলী খন্দকার। তিনি জানান, চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং দাবি করেন যে কাশিপুর এলাকায় এক নারীর সঙ্গে তার ‘গোপন ভিডিও’ রয়েছে। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। লিয়াকত আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন রেদোয়ানকে দোকানে এসে প্রমাণ দেখাতে বলেন। ৭ ডিসেম্বর সে দোকানে এলেও কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে ব্যর্থ হয়। এরপরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরদিন আবার ফোনে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও প্রকৃত সাংবাদিকদের জানানো হলে তারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় দোকানে অবস্থান নেন। নির্ধারিত সময়ে মামুন রেদোয়ান ও জাহাঙ্গীর মোল্লা এলে স্থানীয় জনতা দুজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।।এ সময় উপস্থিত হাওয়া বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান তাকে ও তার মেয়েকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে দুই লক্ষ টাকার সোনার গয়না নিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে তারা। আরও অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েছে—আমরা বিচার চাই।” মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, “আমি বয়স্ক মানুষ, দোকান চালিয়ে সংসার চালাই । আমার সঙ্গে যে প্রতারণা হয়েছে তার কঠোর বিচার চাই। তাই আমি ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। আশাকরি, সঠিক বিচার পাবো। ” ৩৫টি পেশাদার সাংবাদিক সংগঠনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী বলেন, “সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম চলতে দেওয়া হবে না। সবার সহযোগিতায় এই চক্রকে নির্মূল করা হবে।” বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আল মামুন–উল–ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম—এই নামটি এখন দুর্নীতি, তদবির, কমিশন বাণিজ্য আর সন্ত্রাসী-রাজনীতির এক ভয়ংকর মিশ্রণ। এক কথায়—দপ্তরের ভেতরে এক রাষ্ট্রীয় লেবাস পরা দুর্নীতির দানব। তার অপকর্মের তালিকা এত বিশাল যে পুরো অফিসই আজ তার ‘কালো শাসন’-এর সামনে পঙ্গু।তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির পাহাড় তো বহু আগেই জমে ছিল; এবার সেই পাহাড়ে যোগ হলো সন্ত্রাসী দিয়ে ঠিকাদারকে হত্যার হুমকি। এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়—এটি রাষ্ট্রবিরোধী দুঃসাহস, প্রশাসনিক ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহার।
হুমকির বিস্তারিত—যা পড়লেই বোঝা যায় শহিদুল কতটা ভয়ংকর
গত ৩০ নভেম্বর, ঠিকাদার ফারুক হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং–২০৭৬) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়—
নগরীর বখাটে ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুন,
ঝালকাঠির রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বড় হওয়া জুয়েল,
দু’জনই নিজেদের শহিদুলের “ছায়া-গুন্ডা” পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারকে ফোন করে অকথ্য গালাগাল, রক্ত ঝরানোর হুমকি, এবং মেরে ফেলার আল্টিমেটাম দেয়।
এই ভয়ংকর ফোনকলগুলো শহিদুলের অভয়ারণ্য কতটা হানাদারি হয়ে গেছে—তার প্রমাণ।

ফারুক জানান—টেন্ডারের মাধ্যমে বৈধভাবে পাওয়া কাজ শহিদুল অনৈতিকভাবে বিক্রি করে দেন। ফারুক মামলার কথা বলতেই শহিদুলের দুশ্চরিত্র সিন্ডিকেট তাকে ‘গায়েব করার’ ঘোষণা দেয়।
এ যেন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা নয়—এক সন্ত্রাসী গডফাদারের মতো আচরণ।

কোতোয়ালি থানার ওসি জানান—তদন্ত চলছে; আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর শহিদুল?
তার চিরাচরিত নাটক—
“কিছু জানি না, ঢাকায় আছি, পরে জানাবো।”
এমন অভিনয় দুর্নীতিবাজদের মুখস্থ সংলাপের মতো।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশলে শহিদুলের দানবীয় দুর্নীতি—যা ফাইল খুললেই দুর্গন্ধ বের হয়

শহিদুল দপ্তরে যোগদানের পরই তৈরি করেন অপরাধের ‘সোনালি যুগ’—
যেখানে প্রতিটি প্রকল্প, প্রতিটি ফাইল, প্রতিটি বিল তার কমিশনের চাবিতে তালাবদ্ধ।

✔ ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প নিজের নামে তুলে নিয়ে ৭% কমিশনে বিক্রি

✔ ফাইল নাড়াতে চাই কমিশন, বিল ছাড়তে চাই কমিশন, চেক দিতে চাই কমিশন

✔ ৩৫ লক্ষ টাকা কমিশন হিসেবে তুলে নেওয়ার পর অপারেটর রাশেদের পলায়ন

✔ ঢাকার সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে সাপ্তাহিক ইলিশের ঘুষ—অসাধু আঁতাতের চরম উদাহরণ

✔ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিককে দিয়ে দুর্নীতির ‘যুগ্ম শাসন’—দপ্তরকে রূপ দেন মাফিয়া কার্যালয়ে

সব মিলিয়ে শহিদুল আজ বরিশাল ইপিআই দপ্তরে এককেন্দ্রিক দুর্নীতি-রাষ্ট্র গড়ে তুলেছেন।

দপ্তরের ভেতরে ভয়াবহ রামরাজত্ব

সূত্র জানায়—

শহিদুল-আশিক জুটি মিলে পুরো দপ্তরকে ‘কমিশন ট্যাক্স অফিস’ বানিয়ে ফেলেছে।

৬–৮ জন ঠিকাদার সিন্ডিকেট তার পা চাটিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটছে।

সাধারণ ঠিকাদাররা দপ্তরে ঢুকলেই অপমান, ভয়, হুমকি, অপদস্থতা—এটাই তাদের নিয়তি।

এ যেন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়—দুর্নীতির কসাইখানা।
দুদক তদন্তে নামলে কী বের হবে?

একটির পর একটি ভয়ংকর অধ্যায়।প্রকল্প বিক্রির লুকায়িত ডিল।ফাইল আটকে কমিশন আদায়ের রসিদ।রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।সন্ত্রাসীদের বেতন তালিকা।দুর্নীতির টাকার অবৈধ প্রবাহ।

দুদক তদন্তে নামলে শহিদুলের দুর্নীতি-সাম্রাজ্য ভেঙে পড়বে ভূমিকম্পের মতো।

শহিদুল আজ বরিশালের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রশাসনিক অপরাধী

যে ব্যক্তি—

সন্ত্রাসী দিয়ে ঠিকাদারকে মৃত্যুহুমকি দেয়,

কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিজের নামে নিয়ে বেচাকেনা করে,

দপ্তরকে দুর্নীতির দুর্গ বানিয়ে ফেলে,

অভিযোগে পর পর অভিযুক্ত হয়েও বেপরোয়া থাকে—

সে কেবল দুর্নীতিবাজ নয়, প্রশাসনের অন্তরে লুকিয়ে থাকা এক মহাদুর্বৃত্ত।
এমন কর্মকর্তার হাতে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প নয়—
রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পর্যন্ত জিম্মি হয়ে পড়ে।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক //

বরিশালের পোর্ট রোডের শহীদ জিয়া পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে যখন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন সেই পবিত্র আয়োজনের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ছায়া নেমে আসে। দোয়া শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনার ঝড়। কারণ—এই আয়োজনের সারিতে দেখা গেল সরকারি দলের পরিচিত কয়েকজন নেতাকর্মীকে।

যে উপস্থিতি দোয়া মাহফিলকে বিতর্কে ফেলল

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সদ্য কারামুক্ত বরিশাল মহানগর মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি ইয়ার সিকদার। যিনি “বিএনপি’র করা একাধিক মামলার আসামি” বলে পরিচিত। আরও ছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা রাকিব, যিনি “নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলা মামলার আসামি” হিসেবে এলাকায় পূর্ব থেকেই আলোচিত।
এই দুই নেতার উপস্থিতি বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে শুধু ক্ষোভই ছড়ায়নি, বরং দলীয় শুদ্ধি ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নও তুলেছে।

ফেসবুকে ক্ষোভের বিস্ফোরণ

বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চিশতী সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে লিখেন—
“১৭ বছর ধরে আ’লীগের অপকর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দোয়ায় উপস্থিত হয়? কার ইন্ধনে এরা দলে অনুপ্রবেশ করছে?”
তার স্ট্যাটাসে ক্ষোভ যেন চুঁইয়ে পড়ছিল। শুধু একজনের প্রশ্ন নয়—স্থানীয় অনেক নেতারই একই উদ্বেগ: এইসব রাজনৈতিক ছদ্মবেশীরা দলে ঢুকে যে ক্ষতি করছে, তা কি কেউ বুঝতে পারছে না?

ছবিতে দেখা যায়, বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতা কামাল সিকদারের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন ইয়ার সিকদার, আর সামনে শ্রমিক লীগ নেতা রাকিব। দৃশ্যটি অনেকের মনেই অসন্তোষের আগুন আরও উসকে দিয়েছে।

‘ভুল হয়েছে’—ছোট কামালের স্বীকারোক্তি

মহানগর বিএনপি নেতা ছোট কামাল বলেন,
“ওরা পোর্ট রোডের আড়তদার—এই পরিচয়ে দোয়ায় এসেছে। কাউকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারি না। তারপরও আমার ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না।”
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এমন সংবেদনশীল আয়োজনে সাধারণ আড়তদার পরিচয় কি যথেষ্ট? নাকি এর আড়ালে অন্য কোনো পরিকল্পিত অনুপ্রবেশের ছায়া রয়েছে?

দলের ভেতরেই নতুন বিতর্ক: ‘স্বঘোষিত সভাপতি’

বরিশাল মহানগর মৎস্যজীবী দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাম সিকদার অভিযোগ করেন—
“আমি দোয়া মোনাজাতে দাওয়াত পাইনি; অথচ সেখানে আ’লীগ নেতাদের নিয়ে দোয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান সরোয়ারের উপস্থিতিতে “ইয়ার সিকদারের ভাই আজাদ সিকদার নিজেরাই ব্যানার সাটিয়ে স্ব-ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করেছে”, যেখানে ছোট কামালও ছিলেন সহযোগী।
সালাম সিকদার এটিকে দলের ভেতরে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত অনুপ্রবেশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

মহানগর বিএনপির কড়া অবস্থান

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন—
“আ’লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে কেউ যদি কোনো প্রোগ্রাম করে, তা দলের সাংগঠনিক বিধির বাইরে। তথ্য-প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“কেউ অনধিকারভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করলে তা হাইকমান্ডকে জানানো হবে।”

দলের জন্য ক্ষতির বার্তা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক রং বদলানো কিছু ব্যক্তির এভাবে দলীয় কর্মসূচিতে ঘেষাঘেষি করা শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায় না, বরং বিএনপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দুটোই ঝুঁকিতে ফেলে। ইতিহাস বলছে—অনুপ্রবেশ রাজনৈতিক দলকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে।
এই ঘটনার পর অনেকেরই প্রশ্ন:
দলের দুর্বলতা কোথায়? কে দিচ্ছে সুযোগ? আর কতদিন এমন প্রবেশে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

শেষ কথা

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির দোয়ায় সবার অংশগ্রহণই কাম্য—কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে পরিকল্পিতভাবে দলে অনুপ্রবেশ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
সতর্কতা, সংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ এবং যোগ্য নেতৃত্বই পারে এই ধরণের অপপ্রয়াসকে থামিয়ে দিতে

 

আসাদুজ্জামান শেখ ::

বরিশালের শীতের সকালটা ছিল শান্ত, স্বাভাবিক দিনের মতোই। কিন্তু কর্নকাঠি ও চরকাউয়ার মানুষ বুঝতেই পারেনি—তাদের পরিচিত গ্রামীণ পরিবেশকে ঢেকে রাখা ধূসর ধোঁয়ার বিরুদ্ধে আজ শুরু হতে যাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। সকাল থেকেই এলাকাজুড়ে তৈরি হতে থাকে অস্বাভাবিক নড়াচড়া। মুহূর্তেই চেনা পথে ঢুকে পড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়িবহর। সাইরেনের শব্দে কেঁপে ওঠে আশপাশ। বুঝতে বেশি সময় লাগে না—আজই সেই দিন, যখন অভিযানের হাত পড়ছে বহুদিন ধরে চলা অবৈধ ইটভাটাগুলোর ওপর।

ধোঁয়ার নগরীর বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্যের লড়াই

গত কয়েক বছরে বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অনুমোদনহীন ইটভাটা শুধু মাটির স্তরকেই ক্ষতবিক্ষত করেনি; দূষিত করেছে বাতাস, হুমকির মুখে ফেলেছে মানুষের ফুসফুস। স্থানীয়দের অভিযোগ—শীতের আগমনীতে সকাল-সন্ধ্যা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গ্রামগুলো। শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে প্রতিদিনই।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর দপ্তর (ঢাকা)-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাজ্জাদ জাহিদ রাতুলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় বুধবারের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে অংশ নেন বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন এবং প্রসিকিউশন প্রদানের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মোঃ সোহেল মাহমুদ। শুধু তাই নয়—পুলিশ, ১০ এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যদের উপস্থিতি অভিযানে যোগ করে বাড়তি গুরুত্ব।

ইটভাটার চিমনি ভাঙার মুহূর্ত—এক প্রতীকী দৃশ্য

অভিযান শুরু হতেই প্রথমে লক্ষ্যবস্তু করা হয় দুটি ড্রাম চিমনি ইটভাটা। দীর্ঘদিন ধরে কোনো অনুমোদন ছাড়াই চালু ছিল এগুলো। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মুহূর্তেই এগুলো ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে কর্মীরা। লোহার বড় হাতুড়ির শব্দে এলাকার নীরবতা যেন গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল ইটভাটার চিমনির মতোই।

চরকাউয়ার একজন বৃদ্ধ বলেন,


“এই ভাটা বন্ধ হলে আমাদের শ্বাসটা একটু স্বাভাবিক হবে। ঘরে ধোঁয়া ঢুকে নাতি-নাতনিরা কাশি থামাতে পারে না।”

এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়—এ শুধু ইটভাটা ভাঙার অভিযান নয়, মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইও।

সবচেয়ে বড় ভাটা—সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা

সবচেয়ে বড় পদক্ষেপটি নেওয়া হয় ১২০ ফুট চিমনি বিশিষ্ট একটি বিশাল ইটভাটার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এটি স্থানীয় পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি দূষিত করার অভিযোগে ছিল আলোচনায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাইট পরিদর্শন করে আইন অনুযায়ী ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। জরিমানার পরও এখানেই থেমে থাকেনি অভিযান—চিমনিটি ভেঙে পুরো কাঠামোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পানি—মুছে দেয় কাঁচা ইটের আশা

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানি ছিটাতে শুরু করেন কাঁচা ইটের পাহাড়ে। অল্প সময়েই সেগুলো কাদায় পরিণত হয়।
ইটভাটার মালিকদের চোখে তখন হতাশা, আর এলাকাবাসীর চোখে স্বস্তি।

এ অভিযানের প্রতিটি ধাপ যেন জানান দিচ্ছিল—আইনকে অমান্য করলে আর দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ নেই।

আইন শুধু কাগজে নয়—বাস্তবেও প্রয়োগ

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)–এর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত এ অভিযান শুধু আজকের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় বার্তা রেখে গেলো। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভাষায়—
“জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। কোনো অনিয়মই ছাড় দেওয়া হবে না।”

শেষ কথা: পরিচ্ছন্ন বাতাসই ভবিষ্যৎ

অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করা মানে শুধু একটা ব্যবসা বন্ধ করা নয়; এটা এক অঞ্চলের মানুষকে ধোঁয়া-ধুলোর ভয়াবহতা থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা। বরিশালের এই অভিযানে ঠিক সেই মানবিক দায়িত্ববোধই সামনে এসেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে—এ অভিযান ছিল ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। ভবিষ্যতেও জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও কৃষিজমি রক্ষায় এমন অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

 

ভোটের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের ঠাঁই বাংলাদেশে আর হবে না। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশালের বেলস পার্ক মাঠে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও এর ভিত্তিতে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে এ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’

তিনি বলেন, দেশের সম্পদ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও লুটপাট চলছে। বিদেশে ‘বেগম পাড়া’ গড়ে তোলার অভিযোগ তুলে তিনি দাবি করেন, দেশজুড়ে তার (রেজাউল করীম) সফরে জনগণের ক্ষোভ তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। আপনাদের ঠাঁই আর হচ্ছে না।’

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে অনেকে চোখ হারিয়েছেন, পরিবার হারিয়েছে আপনজন। জুলাই শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি যারা করবে, বাংলাদেশে তাদের জায়গা নেই।

জনগণের উদ্দেশে চরমোনাই পীর বলেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে দেখে মানুষ পরিবর্তন চায়। তার দাবি, ইসলামী দলগুলোর জোট ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং দেশ উন্নয়নের পথে এগোবে।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অসুস্থ রাজনৈতিক নেতাদের জন্য দোয়া কামনা করেন।

বরিশালের বেলস পার্ক মাঠে অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশে ইসলামপন্থী আটটি দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। উপস্থিত নেতারা পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

 

বরিশাল মহানগরীতে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার ভয়ংকর নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসা পলাতক আসামি মান্না সুমন অবশেষে আটক করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
গত ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে নগরীর চড়কাউয়া খেয়াঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করা হয়।।

এর আগে ৭ নভেম্বর দুপুরে, নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর এলাকায় কাউনিয়া থানা পুলিশ মান্না সুমনের স্ত্রী শিল্পী বেগমকে আটক করে। সেই সেসময়—১০২ পিস ইয়াবা, ৫০ গ্রাম গাঁজা, ৩০০ মিলিলিটার দেশীয় মদ, কিছু দেশীয় অস্ত্র এবং মাদক বিক্রির নগদ ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৫১০ টাকা পাওয়া যায়।

তবে অভিযানের সময় মান্না পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি থেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। ২৮ তারিখ রাতে তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয়দের দাবি, এই দম্পতি বছরের পর বছর ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। একাধিকবার আটক হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ত।

স্থানীয় বাসিন্দা এক বাসিন্দা জানান— “মান্না আর তার স্ত্রী শিল্পি বহুদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আমরা পুলিশকে বহুবার অভিযোগ দিয়েছি। লোকজন তাদের কারণে আতঙ্কে থাকত। অবশেষে পুলিশ তাকে ধরেছে, এতে আমরা স্বস্তি পেয়েছি।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী এক ব্যবসায়ী জানান—“এই দম্পতির কারণে এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তারা খোলাখুলিভাবেই মাদক বিক্রি করত। বহুবার গ্রেফতার হলেও কিছুদিন পর আবার বের হয়ে এসে আগের মতো ব্যবসা শুরু করত। এবার যেন তারা আর বের হতে না পারে—এটাই আমাদের দাবি।”
কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন—“মান্না ও তার স্ত্রী শিল্পি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

 

স্ত্রী শিল্পি বেগমকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। মান্না পলাতক থাকায় গোয়েন্দা বিভাগ তাকে নজরদারিতে রাখে। শেষ পর্যন্ত তাকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এলাকায় মাদক নির্মূলে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত—কেউই ছাড় পাবে না।”

 

রাজধানীর শ্যামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শতাধিক দলিল নিবন্ধনের কাজ হয়। কিন্তু এ দপ্তরটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই এক কর্মচারীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কথিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন দলিল লেখক ও সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

অফিসের একাধিক দলিল লেখক জানান—সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দলিল জমা দেওয়ার পর তা প্রথমে ওই কর্মচারীর মাধ্যমে “পরীক্ষা” করানো হয়। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রুটি দেখিয়ে দলিলপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে দলিল আটকে রাখা, নানা অজুহাতে বিলম্ব করা এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে মানসিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে।

এক দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“এই অফিসটা পুরোপুরি জিম্মি অবস্থায় চলে গেছে। যে দলিলই দিই, সেটা প্রথমে তার হাত দিয়ে না গেলে অগ্রগতি হয় না।”

তাদের অভিযোগ—প্রায় ৫% অতিরিক্ত কমিশনের নামে নিয়মিত ঘুষ নেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক হয়রানির শিকার হন, আর দলিল লেখকদের ওপর সৃষ্টি হয় অযৌক্তিক আর্থিক চাপ।

স্বল্প বেতনে বিপুল সম্পদের অভিযোগ

অফিসের একাধিক সূত্র জানায়—স্বল্প বেতনের দাপ্তরিক পদে থাকার পরও কথিত ওই কর্মচারীর নামে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় দু’টি ফ্ল্যাট, তেজগাঁও হকার্স মার্কেটে দোকান এবং স্থানীয় এক মার্কেট সমিতির নির্বাচনে বিপুল টাকা ব্যয় করে পদ লাভের ঘটনা বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলেছে।

তাদের দাবি,
“মাসিক ১৫০০ টাকার হাজিরায় কেউ যদি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাহলে তদন্ত ছাড়া সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ থাকাই স্বাভাবিক।”

যোগাযোগে সাড়া মেলেনি

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য জানতে স্বদেশ বিচিত্রা অফিস থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে অভিযোগ সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

দুদকের তদন্ত দাবি

দলিল লেখক, ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয়দের দাবি—অফিসটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে এবং কথিত দুর্নীতি চক্রের সন্ধানে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি তদন্ত প্রয়োজন।

 

 

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে ঘুস গ্রহণের অভিযোগে বদলি করা হয়েছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তাকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় বদলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

শফিকুল ইসলাম প্রায় পাঁচ বছর ধরে নান্দাইলে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় সব ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে তার। এ সুযোগে ঠিকাদারদের বাড়তি সুবিধা দিয়ে তিনি আর্থিক ফায়দা আদায় করতেন বলে অভিযোগ উঠে। এ অবস্থায় গত ১৭ নভেম্বর ফেসবুকে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি অফিসে তার চেয়ারে বসে একজনের কাছ থেকে ঘুসের টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে টেবিলের ড্রয়ারে রাখছেন; কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এগিয়ে আসেন সংশ্লিষ্ট অফিসের ঠিকাদাররা। পরদিন ১৮ নভেম্বর তারা (ঠিকাদাররা) অফিসের কেউ না হয়েও নান্দাইল উপজেলা এলজিইডি অফিসে সাংবাদিকদের ডেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সম্মেলনে তারা প্রকৌশলীর টাকা গ্রহণের ভিডিওটি ঘুস গ্রহণের কোনো ভিডিও নয়, সেটি বিয়ের উপঢৌকন বলে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানান। কিন্তু ১৮ নভেম্বর যুগান্তরে ‘উপসহকারী প্রকৌশলীর ঘুসের ভিডিও ফাঁস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামকে নান্দাইল থেকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় বদলির ব্যবস্থা করে।

বদলি হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল মালেক বিশ্বাস বদলির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রোববার হেড অফিস থেকে তাকে বদলি করা হয়েছে, তবে কী কারণে বদলি করা হয়েছে, সেটি তো বলতে পারব না, সেটা প্রশাসনিক বিষয়।